চা গাছের ফুল। নাম ক্যামেলিয়া জাপুনিকা (Camellia Japonica)। এটি তার বৈজ্ঞানিক নাম। চা গাছে সারা বছর এ ফুল দেখা না গেলেও এই সময় দৃষ্টিনন্দন এ ফুল চা গাছে চোখে পড়ে। দেখতে সাদা হলেও আরো বিভিন্ন রঙের দেখা যায়। অনেকটা গোলাপ ফুলের মতো।
শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামিম আল মামুন জানান, ক্যামেলিয়া জাপুনিকা (Camellia Japonica) বা জাপানিজ ক্যামেলিয়া-এ ফুলের চা গাছ ২০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। বর্তমানে এই ফুলের ২০০০-৩০০০ হাইব্রীড ভ্যারাইটি বিদ্যমান। এটি চা পরিবারের (Family) উদ্ভিদ হলেও এ গাছ হতে চা পাতা উত্তোলন করা হয় না। এটি ফুলের জন্য চাষ করা হয়। আমরা যে চা পান করি সে চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ঈধসবষষরধ ঝরহবহংরং। তবে দুটি গাছই ঞযবধপবধপ পরিবার ভুক্ত। Camellia Japonica কে শীতের রানী’ বা কখনও ‘শীতের গোলাপ’ বলা হয়ে থাকে। আগেকার দিনে ক্যামেলিয়া ফুল কে দীর্ঘায়ু ও বিশ্বস্থতার প্রতীক মনে করা হতো। আকর্ষণে অতুলনীয়। সাধারণত ডিসেম্বর-মার্চ মাসে চা গাছে এ ফুল দেখা যায়।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রিয়াদ আরেফিন জানান, সারা বিশ্বে পানীয় চায়ের বৈজ্ঞানিক নাম Camellia sinensis। তবে এলাকাভেদে প্রকৃতিতে এই প্রজাতির চা গাছ ছাড়াও আরো নানা প্রজাতির চা গাছ পাওয়া যায়। এদের কোন কোন প্রজাতির চা পানযোগ্য নয়। আবার কোন কোন প্রজাতির চা গাছ (বীজ) থেকে তেল নিঃসরণ করা হয়, আবার কোন প্রজাতি চাষ করা হয় প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য। এমনি একটি প্রজাতি হল ক্যামেলিয়া জাপুনিকা (Camellia japonica)। এই প্রজাতির গাছের পাতা উপবৃত্তাকার বা আয়তাকার-উপবৃত্তাকার, ফ্যাকাশে সবুজ হতে গাঢ় সবুজ, উভয় পৃষ্ঠতল চকচকে হতে পারে। এই প্রজাতির চা গাছের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ যা অন্য সকল প্রজাতি থেকে একে ভিন্নতর করেছে।
এই প্রজাতির ফুলের রঙ গোলাপী বা সাদা হতে পারে, যা Camellia sinensis গাছের ফুলের চেয়ে ৪-৫ গুন বড়। এই প্রজাতির ফুলে ছয় বা সাতটি গোলাপী বা সাদা পাপড়ি থাকে। প্রতিটি ৩ থেকে ৪.৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১.৫ থেকে ২.৫ সেন্টিমিটার চওড়া হয়। সবচেয়ে ভিতরের পাপড়িগুলি তাদের দৈর্ঘ্যরে এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত গোড়ায় যুক্ত থাকে। এই ফুল এলাকা ভেদে নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ফোটে। পরিবেশের তাপমাত্রা কমে গেলে এবং দিনের দৈর্ঘ্য কমে গেলে এই প্রজাতির ফুল ফোটা আরম্ভ হয়। বিভিন্ন দেশে বাসা-বাড়ির সৌন্দর্য্য বর্ধনে আঙ্গিনায় কিংবা ছেঁটে হেজ গাছ হিসেবেও এই গাছ লাগানো হয়ে থাকে।