অনেক আলোচনা, সমালোচনার পরও কোনো অবস্থায়ই যেন সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না। বরং প্রতিবছর বাড়ছে সড়কে মানুষের মৃত্যু। ভাগ্যগুনে আক্রান্ত হবার পর বেঁচে গেলেও তাদের বইতে হচ্ছে পঙ্গুত্বের অভিশাপ। ছোট গাড়ি বড় ঝুঁকি হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেল। আর অন্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল আরোহী ছাত্র সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিরা পরিবারের প্রধান বা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ফলে আক্রান্ত পরিবার গুলো দারুণ ভাবে আর্থিক সংকটে পড়েছে। তাই ব্যক্তির মৃত্যু বা পঙ্গুত্ব দেশের আর্থিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রাজধানী ঢাকায় একবছরে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে প্রায় ৯৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে ৭৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। দুর্ঘটনার বড় শিকার পথচারীরা। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে গাড়ি চাপায় বা গাড়ির ধাক্কায়। এ ছাড়া মানুষের মাঝে অ-সহিষ্ণুতা বেড়ে গেছে, যত্রতত্র দিয়ে রাস্তা পারাপার, মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে বা দেখতে দেখতে পথচলা এবং যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। অন্যদিকে ট্রাফিক আইন মেনে না চলার প্রবণতাও সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৫৬ লাখ। এর মধ্যে মোটর সাইকেল ৪০ লাখের বেশি। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলও চলাচল করে। যানবাহনের সংখ্যার বিচারে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং এর চালক তরুণ ও ছাত্র হওয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হারও বেশি। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মতে, গত বছর সড়কে ১ হাজার ২৩৭ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে ডিসেম্বরে। আর সংখ্যার দিক থেকে তুলনামূলক কম মৃত্যু ঘটেছে এপ্রিলে-৬৩ জন। বিদায়ী ২০২২ সালের মে, জুলাই, অক্টোবর ও ডিসেম্বরে, এ চার মাসে প্রতিমাসেই শতাধিক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে সড়কে। এর মধ্যে মে মাসে ১০৭ জন, জুলাইয়ে ১০৪ জন এবং অক্টোবরে ১২৩ জন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭ হাজার ৭১৩ জন। মোট নিহতের ১৬ শতাংশের বেশি ছিল শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে বড় অংশের মৃত্যু হয়েছে মোটর সাইকেলে। অন্যদিকে দূবৃত্তায়িত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো চরম ভাবে বেড়ে গেছে। সড়ককে নিরাপদ করতে ২০১৮ সালে দেশ কাঁপানো আন্দোলন করেছিল শিক্ষার্থীরা। সরকার সড়ক নিরাপদ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বরে আশ্বাস দিলেও সড়ক নিরাপদ হয় নি, বরং দিনকে দিন সড়ক হয়ে উঠেছে মৃত্যু কুপ। ফলে পুরো সড়ক ব্যবস্থাপনা বদলানো এখন সময়ের দাবি। শৃঙ্খলা না আসলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে কি করে? আগামী প্রজন্ম শিক্ষার্থীদের মূল্যবান জীবন বাচাতে ও সাজাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির তোয়াক্কা না করে উদ্যোগ সরকার কেই নিতে হবে।