জমির উপরি অংশের নরম (টপ সয়েল) মাটিই জমির উর্বররা শক্তি। যে জমির উর্বররা শক্তি বেশি তার উৎপাদন ক্ষমতাও অনেক বেশি। আবাদি জমির প্রাণ বলে খ্যাত মাটির উপরিভাগ বা মাটির উপরের অংশ (টপ সয়েল)। মাটির উপরি ভাগের নরম অংশটির উর্বররা শক্তিই ফসলি জমির প্রাণ। আর সেই উর্বররা শক্তি কেটে নিয়ে পুড়ানো হচ্ছে জেলার বিভিন্ন ইটভাটায়। একারনে দিন দিন কমতে শুরু করেছে কৃষিজাত ফসল বা ফলন। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেও রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, চাষাবাদের সময় জমিতে প্রয়োগ করা জৈব ও রাসায়নিক সারের একটা বড় অংশ ফসল উঠলেও জমিতে থেকে যায়। যা পরবর্তি ফসল বুনার সময় বেশ কাজে লাগে। ফসলি জমির উপরের অংশ উর্বররা শক্তি কেটে নিলে ওই জমি শক্তিহীন হয়ে প্রানহীন হয়ে পড়ে। ফলে পরবর্তি কয়েক বছর ওই জমির উৎপাদন ক্ষমতা দারুন ভাবে হ্রাস পায়। ফলে উচ্চমুল্যে চাষাবাদ করেও আশানুরূপ ফসল না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষকরা
শুস্ক মৌসুমে এসব জমির উপরি অংশের ২/৩ ফিট পর্যন্ত মাটি প্রায় প্রতিনিয়তই কেটে নেয়া হচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এসব জমির মাটি খুড়ে তুলে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছে। এ ক্ষেত্রে জমির মালিককে জৈবসার কেনা বাবদ সামান্য কিছু অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। কৌঁসুলি এসব ব্যবসায়ী উঁচু জমিকে টার্গেট করে কৃষকদের ভুলভাল বুঝিয়ে রাজি করাচ্ছেন। তারা কৃষকদের বলেছেন, উঁচু জমিতে পানি বেশি লাগে তাই জমি নিচু করা দরকার। এসব ভুল তথ্য দিয়ে জমি খুড়তে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন।
কৌশলী মাটি ব্যবসায়ীরা এ বছর যে জমির মাটি তুলে নিয়ে গভীর করছে। পরের বছর তার পাশের জমির মালিকদেরও কজ্বায় নিচ্ছেন। কারণ সর্বদায় নিচু জমিতে নেমে যায় পানি ও পলি। এ ফাঁদে পা দিতে বাধ্য হচ্ছেন পাশ্ববর্তি জমির মালিকরাও। এভাবেই ফসলি জমির প্রাণ কেটে নিয়ে প্রতিনিয়ত ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে।
কৃষকরা তাদের চাটুকদারী কথায় রাজি হয়ে জমি খুড়ে মাটি দিচ্ছেন ইটভাটায়। ভাঁটা মালিকরা এসব মাটি নিয়ে তৈরী করছেন ইট। ভাঁটা মালিকরা এভাবে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছেন চাষিরা। উৎপাদন কমে গিয়ে ভেঙ্গে পড়ছে জেলার কৃষি অর্থনীতি।
তবে এসব মাটি দস্যুদের দমন করতে প্রায় সময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু জরিমানা দিয়েও থেমে নেই ফসলি জমির মাটি খুড়ে ইটভাটায় বিক্রির ব্যবসা। জরিমানা গুনেও চালিয়ে যাচ্ছেন এ ব্যবসা। ফলে জেলার উঁচু জমিগুলো প্রতিনিয়ত নিচু হয়ে যাচ্ছে।
জেলার সব ইটভাটায় এসব ফসলি জমির উপরি অংশের উর্বররা মাটি দেখা যায়। তবে এসব মাটি ফসলি জমি থেকে আসলেও জমির কোন মালিকের কাছ থেকে জোরপুর্বক নেয়া হয়না বলে দাবি ভাঁটা মালিকদের। তারা বলছেন, জমির মালিকরাই টাকার বিনিময়ে মাটি বিক্রি করছেন। ইট তৈরীর জন্য কাচামাল হিসেবে এসব মাটি কিনে নিয়ে ইট তৈরী করছেন তারা।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ফসলির জমি উপরের অংশের ৬/৮ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত মাটির নিউটেরিয়ান থাকে। কোন কারণে এ অংশ উঠে গেলে ওই জমির শক্তি চরম ভাবে ব্যাহত হয় এবং উৎপাদনও ব্যাপক ভাবে হ্রাস পায়। নিউটেরিয়ান উঠে গেলে ওই জমিতে পুনরায় স্বাভাবিক হতে নুন্যতম ৫/৭ বছর চাষাবাদ করতে হয়। এই দীর্ঘ সময়ে উৎপাদন কমে গিয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। এ কারণে ফসলি জমির মাটি না তুলতে প্রতিনিয়ত কৃষকদের সচেতনতা করতে বিভিন্ন সভা সমাবেশ ব্যাপক বাবে আলোচনা করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, জমির মাটি বিক্রি না করতে কৃষকদের বলা হচ্ছে এবং এসব মাটি ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানাও করা হচ্ছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে যে জায়গা থেকেই অভিযোগ আসুক আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিব।