দেশে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের কাছ থেকে কর আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নানা ধরনের উদ্যোগ নেয় কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। কারণ, এতে সরকার অন্তত সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি নাগরিক নানা কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের সঠিক সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও ইমিগ্রেশন পুলিশের ডেটাবেজের তথ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ২ লাখেরও বেশি বিদেশি অবস্থান করেছেন। তাদের মধ্যে অর্ধেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বোঝাই যায়, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা মূলত অবৈধভাবে এ দেশে কাজ করছেন। অধিকাংশ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে টুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করেন। এরপর অনেকে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। বিদেশিদের আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ আয়কর ধার্য আছে। তাই অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশিদের নিয়োগ দিয়ে তাদের বেতনভাতা গোপন রাখে। এর মাধ্যমে শুধু কর ফাঁকি নয়, বিদেশিদের হুন্ডিতে বাকি টাকা পরিশোধ করার কারণে অর্থ পাঁচারও হচ্ছে। কাজেই বিদেশিদের কর ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ইতঃপূর্বে বিদেশি কর্মীদের কাছ থেকে কর আদায়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। এ টাস্কফোর্সের কাজ ছিল প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে কর ফাঁকিবাজ বিদেশিদের চিহ্নিত করা। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানোর পর টাস্কফোর্সের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর অর্থমন্ত্রী বিদেশি কর্মীদের শনাক্ত করে আয়কর আদায় বৃদ্ধি ও অর্থ পাঁচার রোধে এনবিআর, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, এখনো এ নির্দেশের বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। কারণ, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে এ দেশে কাজ করায় একদিকে দেশের যুবশক্তি কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আর্থিকভাবে। আয়কর অধ্যাদেশে অবৈধভাবে বিদেশিদের নিয়োগ দিলে নিয়োগদাতাকে সর্বনিম্ন তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক দণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। এ আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।