আড্ডায় আড্ডায় যেন মুখরিত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডায়না চত্বর। এখানেই হাসি-কান্নার কথোপকথনে চলে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আড্ডা। সারাদিনে যখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন ও অ্যাসাইনমেন্টসহ শিক্ষা কার্যক্রমে মনটা ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন যেন মনকে প্রফুল্ল করতে এখানে উপস্থিত হয় শিক্ষার্থীরা।
ইবি ক্যাম্পাস সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে ভরপুর। এখানে নান্দনিক অনেক স্থান রয়েছে। নিয়মিত ডায়না চত্বরের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আড্ডা জমে মফিজ লেক, বটতলা, আমতলা, ঝাঁল চত্বর, টিএসসি প্রাঙ্গণ ও জিয়া মোড়। তবে সকল আড্ডার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে ডায়না চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের পর প্রশাসনিক ভবনের সমনে সকলের চক্ষু শীতল করে দাঁড়িয়ে আছে চিরসবুজ এ চত্বরটি। যার মুখেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে "মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব" চত্বরটির সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থিত ডায়না চত্বরটি এখন পরিণত হয়েছে আড্ডার কেন্দ্র। বাহারি প্রজাতির পাতাবাহার আর রঙিন সোনালু ফুলে ঘেরা চত্বর। ১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুর পর তার নামে নামকরণ করা হয় এই চত্বরের।
বন্ধুদের খুনসুটি-আড্ডা, গিটার হাতে সুরের মূর্ছনা, রাবীন্দ্র-নজরুল চর্চায় কাব্য ও পথনাটক মঞ্চায়ন, সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের মিলনমেলায় সদা উৎফুল্ল এই চত্বরটি। শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে পিঠের বোঝা রেখে মেতে উঠে আনন্দ উদ্দীপনাময়। মনে হয়, তারা বন্দিশালা থেকে বেরিয়ে এসে হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। গল্পের আসরে থাকে ব্যতিক্রম ধর্মী হালকা খাবার, তা নিয়ে সেলফি তুলে আনন্দ করে নবজীবন দান করে চত্বরটিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে কর্মস্থলে ফিরেও সাবেক শিক্ষার্থীরা স্মরণ করে ডায়নায় কাটানো সোনালী বিকেল গুলোর কথা। সুযোগ পেলে তাঁরা ফিরে আসে ইবিতে মুগ্ধ হয় ডায়নার ভালোবাসায়। ডায়না চত্বর সকাল, দুপুর, বিকেল ও সন্ধ্যা জুড়ে থাকে শিক্ষার্থীদের দখলে। দেখলে মনে হবে শিফট ভাগ করে করে শিক্ষার্থীরা আড্ডায় জমে, এক দলের আসন ত্যাগ, অন্য দলের আগমনের মধ্য দিয়ে ডায়না চত্বর দীর্ঘায়ু লাভ করেছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি আনন্দের উন্মুক্ত স্থান হিসেবে ডায়না চত্বর সুপরিচিত। এক কথায় বলা যেতে পারে, ১৭৫ একর ইবির ছায়াঘেরা সবুজ ক্যাম্পাসের প্রতিনিধিত্ব করে ডায়না চত্বর।
ডায়না চত্বর ইবির সামাজিক সংগঠনগুলোর অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয়। সমাজিক সংগঠনগুলো ডায়নায় মাসিক বৈঠক, নবীন বরণ ও নানা আয়োজন করে থাকে। ডায়না চত্বর প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে অঙ্কিত হয়েছে সাংস্কৃতিক চর্চার মুক্ত কেন্দ্র হিসেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদীস বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া আহমেদ ফয়েজ বলেন, ডায়না চত্বর ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনন্য মুগ্ধকর স্থান। ক্যাম্পাসে প্রবেশ দ্বারে এই চত্বরটি যেনো নকশীকাঁথার মতো এক অপরূপ চিত্র ধারণ করে আছে। ক্লাস ফাঁকে ডায়নায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা ও খুনসুটি আমাদেরকে উজ্জীবিত করে।