বিএনপির সংসদ সদস্য পদত্যাগ করায় শূন্য হওয়া বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে নেই নির্বাচনী আমেজ। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পরেও নির্বাচনী এলাকা ঘুরে তেমন কোনো নির্বাচনী আমেজ চোখে পড়েনি। কারণ জানতে চাইলে ভোটাররা জানান, এই এলাকায় নৌকা ও ধানের শীষ নেই। এই কারণে আমেজও নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে।
জানা য়ায়, আওয়ামী লীগ বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে প্রার্থী দেয়নি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ ইনু) এ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বগুড়া জেলা জাসদের সভাপতি ও সাবেক এমপি একেএম রেজাউল করিম তানসেন এই আসনে মশাল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। আওয়ামী লীগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে সাবেক এমপির দূরত্ব থাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মশাল প্রতীকের পক্ষে কাজ শুরু করেননি। তবে মশাল প্রার্থীর পক্ষে এলাকায় পোস্টারিং ও মাইকিং চলছে। তবে নৌকার প্রার্থী না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই আসনটি ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালে বিএনপির জেডআইএম মোস্তফা আলী ১ লাখ ৩১ হাজার ৪১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম মহাজোটের (জাসদ) প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম নৌকা প্রতীকে ভোট পান ৭৫ হাজার ৯৯১। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এই নির্বাচনে মশাল প্রতীক নিয়ে ২২ হাজার ২০৩ ভোট পেয়ে রেজাউল করিম তানসেন নির্বাচিত হন। রেজাউল করিম তানসেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির কাছে হারলেও এবারের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
দলীয় সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর বগুড়া-৪ আসনের মোশারফ হোসেনসহ বিএনপির ৭ সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেন। ছেড়ে দেওয়া এই আসনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের উপ-নির্বাচনের প্রার্থীরা হলেন- বগুড়া জেলা জাসদের সভাপতি রেজাউল করিম তানসেন (মশাল), সাবেক পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল (কুড়াল), জাকের পার্টির আবদুর রশিদ সরদার (গোলাপ ফুল), কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন মোস্তফা কামাল (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির তাজ উদ্দিন মন্ডল (ডাব)।
এদিকে বগুড়া-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের প্রার্থীতা বাতিলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে তার প্রার্থীতা ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে প্রতীকও বরাদ্দ হয়েছে। প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করেননি। তার জানামতে মাঠে জনগনের সাথে প্রার্থীর যোগাযোগও নেই। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে দ্বন্দ্ব নেই। তারপরেও দ্বন্দ্ব থাকলেও একজন প্রার্থীর তা মেটাতে হবে। সে তো কাউকে ডাকেনি বা যোগাযোগ করেনি। এমতাবস্থায় তার সঙ্গে অনেকেই থাকবে না।
নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক শফি উদ্দিন বলেন, গত নির্বাচনের পর থেকে প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারন জনগণের খোঁজখবর রাখেনি। অথচ আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করেই ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন রেজাউল করিম তানসেন। নির্বাচন বিষয়ে তার সঙ্গেও এখনো যোগাযোগ করেননি বলেও জানান তিনি।
থালতামাজগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের দলীয় প্রার্থী না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের অনেক কর্মীদের ভোটের আগ্রহ কম। দলীয় প্রার্থী না থাকায় আমরা হতাশ। তারপরেও দলীয় যে নির্দেশনা আসবে, আমরা সেই ভাবে কাজ করবো।
চাঙ্গুইর গ্রামের ভোটার নওশাদ আলী বলেন, 'গ্রামে ভোট চেয়ে কোনো প্রার্থী আমাদের কাছে আসেনি। আমাদের ভোট দিলেও কি? না দিলেও কি?'
কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ বলেন, দেরিতে হলেও গত সোমবার রাতে মশাল প্রতীকের প্রার্থী এসেছিলেন। আমরা আগামী বৃহস্পতিবার কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে মিটিং করে তার জন্য মশাল প্রতীকে ভোট করবো।
ভোটাররা বলছেন, বিএনপির ছেড়ে দেওয়া এই আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্তত সাতজন নেতা। এ নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকতেন তা হলে নির্বাচনে অন্যরকম আমেজ থাকতো। ভোটের লড়াইটাও হতো হাড্ডাহাড্ডি বলে ধারণা উপজেলাবাসীর। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে জাসদকে আসনটি ছেড়ে দেয়ায় মশাল প্রতীকে ভোট চাওয়ায় আগ্রহ নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান সিদ্দিকী মাঠে ফেরায় হিসাবনিকাশ পাল্টেছে। এখন কামরুল হাসানের সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অতীতে সংসদ সদস্য পদ পেয়েছেন নন্দীগ্রাম উপজেলার প্রার্থী। এতে কাহালু উপজেলার মানুষ উন্নয়ন কর্মকা-ে নানাভাবে বঞ্চিত। এবার কাহালু ভোটারদের মুখে এক সুর, সংসদ সদস্যের পদ কোনোভাবেই নন্দীগ্রামে যেতে দেবেন না। এ সুযোগ নিতে পারেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শাহীন মোস্তফা কামাল।
১৪ দলের শরীক জাসদের বগুড়া-৪ আসনের প্রার্থী সাবেক এমপি রেজাউল করিম তানসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে তার ছোট ভাই নন্দীগ্রাম উপজেলা জাসদের সাধারন সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রুস্তম বলেন, ইতোমধ্যে দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই তাদের সাথে মিটিং করে একজোট হয়ে মশালের পক্ষে কাজ করবেন।