রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু দিন দিন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরগুলো আশেপাশে থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িঁয়েছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ক্রমেই বাড়ছে সংঘাত, ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণসহ হত্যাকান্ডের মত ঘটনা। রোহিঙ্গারা স্থানীয় বাসিন্দাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ওপরও হামলা করছে বলে জানা যায়। সংবাদমাধ্যমের থেকে জানা যায়, বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার হার বেড়েছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন আদালতে ২ হাজারের মতো মামলা চলমান। ৩২ রোহিঙ্গা শিবিরে গত পাঁচ বছরে ১৩৫ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পারিবারিক সহিংসতা ছাড়াও মাদক, অস্ত্র, ছিনতাই বেশি হয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে ২০১৭ সালে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গদের একটা অংশ ২০১৮ সালের শুরু থেকে অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। এর পর থেকে গত পাঁচ বছরের অধিক সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একে একে ১৩৫টির মতো খুনের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাত চাঁদাবাজি, মানব পাঁচার, সোনা চোরাচালানসহ ১৪ ধরনের অপরাধের অভিযোগে ৫ হাজার ২২৯টি। ২০১৮ সালে দেশব্যাপী চালানো মাদকবিরোদী অভিযানে কক্সবাজারে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ২৭৯ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ১০৯ জন। বর্তমানে ক্যাম্পে ছোটবড় মিলিয়ে শতাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এই গ্রুপগুলোতে একেকটির সদস্য সংখ্যা রয়েছে ৫০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত। ক্যাম্পে সক্রিয় রয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, ইসলামী মাহজ, জমিওয়তুল মুজাহিদীনসহ আরও কয়েকটি সংগঠন। সংগঠন গুলোর বিরুদ্ধে টার্গেট কিলিংসহ অন্যান্য অনেক অপরাধের অভিযোগ পাওয়া যায়। পান থেকে চুন খসলেই হঠাৎ করেই স্থানীয়দের ওপর আক্রমন চালানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হয় না তাই দিন দিন তাদের আগ্রাশন বেড়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এভাবে চলতে থাকলে আশেপাশে থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই আইন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ক্যাম্পের চিহ্নত অপরাধীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি চেকপোস্ট ও টহল জোরদার করা জরুরি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সরকারকে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের এমন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। অন্যথায় পুরো দেশকে এমন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রভাবে পড়তে হবে। যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও বিভিন্ন অপকর্ম নির্মূল হবে এমনটাই কাম্য থাকবে।