ভারতের ভেলরে চিকিৎসাধীন এসিডদগ্ধ পটুয়াখালীর এক সুমাইয়ার পুলিশ সুপারের কাছে কান্নাজড়িত কন্ঠে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে তার করুন আকুতি, ‘আপনারা আমার চিকিৎসা খরচ যোগান দিয়ে আমাকে একটু বাঁচান। আমি আর এসিডের পোড়া যন্ত্রনা সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ, আপনারা আমাকে বাঁচান’। অর্থের যোগান দিতে না পেরে ভ্যালুরে চিকিৎসাধীন সুমাইয়ার বাবা ও মা মেয়েকে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। হৃদয় বিদারক ঘটনার বর্ননা দেন পটুয়াখালী পুলিশ সুপার।
অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না এসিডদগ্ধ ফেরদস সুমাইয়া (১৮)। বর্তমান সে ভারতের ভেলরের সিএমসি হাসপাতাল চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সুমাইয়া সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের গেরাখালী গ্রামের রাজা মিয়া গাজী ও তাসলিমা বেগমের মেয়ে।
২০২১ সালর ৩ আগস্ট রাতে দুর্বত্তদের নিক্ষেপ করা অ্যাসিডে ঝলসে গিয়েছিল সুমাইয়া ও তাঁর ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী (১২)। এ ঘটনার পর ২৮/০৮/২০২১ইং তারিখ সুমাইয়ার খালা রেবেকা বেগম বাদি হয়ে এনায়েত গাজীর নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ১৫/১০/২০২২ইং তারিখ এনায়েত গাজী (৩০), রাসেল গাজী (৩০) ও রাসেলের স্ত্রী মারিয়া বেগমের (২০) নামে আদালত চার্জসীট দাখিল করেন। মামলাটি বর্তমান বিচারাধীন রয়েছে।
এদিক সুমাইয়া অর্থের অভাবে ওষুধ কিনে খেতে পারছে না এবং তার বাবা-মাও দেশে চল যাওয়ায় সে এখন একা ভেলরে মত্যুর সঙ্গ লড়াই করছেন। সুমাইয়া আকুতি ও কান্নাকাটি করে এমন একটি ভিডিও বার্তা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছেন পটুয়াখালীর পুলিশ সুপারের কাছ। পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
জানা যায়, ২০২১ সালর ৩ আগস্ট রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে জেলার সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের গেরাখালী গ্রাম ঘুমন্ত ছাত্রী সুমাইয়া ও তাঁর ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী (১২) এই দুই ভাই-বোনের ওপর অভিযুক্তরা অ্যাসিড নিক্ষপ করে। এত ঝলসে যায় দুই ভাই-বোনের শরীর। সুমাইয়া তখন আউলিয়াপুর মহিলা মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগের ছাত্রী ছিলেন এবং ভাই মোহাম্মদ আলী একটি মাদ্রাসায় কোরআন শরীফ শিখছিলেন। সুমাইয়া ২০২১ এইচএসসি পাস করে এবং বর্তমান পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগর প্রথম বর্ষর ছাত্রী।
ফেরদৌসি সুমাইয়া বলেন, ‘তাঁর আপন চাচাতা ভাই আমার গায়ে অ্যাসিড মেরেছে। আমার বাবা ও মা আমাকে নিয়ে ভারতের ভেলরে চিকিৎসা করাতে এসেছেন। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রথমে বাবা দেশের বাড়িতে চলে যান এবং গত ২/৩ দিন আগ মাও চলে যান। এখন আমি ভেলরে একা পড়ে আছি। অর্থর অভাবে ওষুধ কিনে খেতে না পারায় আমার মুখ ফুল উঠেছে এবং প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে। আমি আমার চাচাতা ভাইর বিরুদ্ধে কথা বলায় বাবা আমার উপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। ভাতিজাকে বাঁচানোর জন্য বাবা আমাকে অসহযোগিতা করছেন এবং ভালাভাবে চিকিৎসাও করাচছেন না। আমাকে নিয়ে আমার বাবা একশ’ বার সালিশ বৈঠক বসেছেন। এতে আমি নানাভাব প্রতারিত ও নির্যাতীত হয়েছি। এমনকি আমার বাবার কারণে আমার মামলাটিও এখন ধংস হওয়ার পথে এবং তাঁর (বাবা) কারণে আসামিরা সবাই এখন জামিনে আছে।
এ প্রসঙ্গ সুমাইয়ার বাবা রাজা মিয়া গাজী বলেন ‘আমার মেয়ে সুমাইয়া এখন ভারতের ভেলরে চিকিৎসাধীন রয়েছে। টাকা জোগার করতে আমি আগেই চলে এসেছি এবং ২/৩ দিন হয় সুমাইয়ার মাও চল এসেছেন। টাকা জোগার হলেই আমরা আবার ভেলর চলে যাবো। এ ছাড়া আমার ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। ভিসার মেয়াদও বাড়াতে হবে। আমার বিরুদ্ধে মেয়ে যেসব অভিযোগে করছে তা সঠিক নয়। বাবা হয়ে আমি এ কাজ করতে পারি না’।
পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত শেষে তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জসীট দেয়া হয়েছে এবং মামলাটি বর্তমান বিচারাধীন রয়েছে। এখন মানবিক দিক থেকে এ মেয়েটির পাশে সকলের দাঁড়ানো উচিত। পটুয়াখালীর পুলিশ প্রশাসন থেকে মেয়েটিকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করা হবে।