বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখির আগমন ঐতিহ্যগত। ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ একটি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হওয়ায় শীতকালে তীব্র শীত প্রধান দেশ হতে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে লাখ লাখ পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেঁচে থাকার তাগিদে ছুটে আসে। পুরো শীত মৌসুম তাঁরা বাংলাদেশে অবস্থান করে এবং শীত মৌসুম শেষে পুনরায় নিজ দেশে ফিরে যায়। ক্ষনিকের জন্য জীবণ রক্ষার তাগিতে পরিযায়ী পাখিরা বাংলাদেশে এলেও তাঁরা এ দেশের পাখি প্রেমী মানুষকে দিয়ে যায় অনাবিল আনন্দ। শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখির অবস্থান কেন্দ্রগুলো যেন পর্যটন স্থানে রুপ লাভ করে। পরিযায়ী পাখির সুরক্ষায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নানাবিধ উদ্যোগ। পরিযায়ী পাখির বসবাসের স্থানগুলোকে অভয়ারণ্য হিসাবে ঘোষনার পাশাপাখি তাদের নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয় নানাবিধ উদ্যোগ।
পরিযায়ী পাখি আগমনের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হলো নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদী। এই নদীর কুঞ্জবন নামক স্থানে গত কয়েক বছর ধরেই দল বেঁধে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখি। এ বছরও কুঞ্জবন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি। সরেজমিনে কুঞ্জবন নদী পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, চলতি শীত মৌসুমে বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরা পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙজাহাঁস, বালিহাঁস, পাতিকুট, শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নি হাঁসসহ প্রায় ১২জাতের দেশি-বিদেশী পাখির সমাগম ঘটেছে কুঞ্জবনে। এলাকাবাসীদের সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, এসব পরিযায়ী পাখি প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর স্বচ্ছ পানিতে কলরবে মেতে ওঠে। পাখিদের কিচির মিচির শব্দ, উড়ন্ত পাখিগুলোর ডানার আওয়াজ আর নদীর জলের সাথে তাদের জলকেলির শব্দ যেন মুখরিত করে রাখে পুরো এলাকা। সারাদিন নদীতে থাকলেও রাতে পাখিগুলো ফিরে যায় পাশের রামচন্দ্রপুর ও মধুবসহ এলাকার বিভিন্ন গাছে। ভোরে আবারও ফিরে আসে আত্রাই নদীতে। বিভিন্ন রং বে রংয়ের পরিযায়ী পাখি ও তাদের মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য উপভোগের জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করে নদী পাড়ে। পরিযায়ী পাখি দর্শন করে তাঁরা ঘরে ফিরছে প্রশান্তি নিয়ে।
পরিযায়ী পাখি দেখতে আসা দর্শনার্থী আবদুল হাকিম, খবির উদ্দিন বলেন, নদীতে পরিযায়ী পাখি আসার খবর শুনে আমরা দেখতে এসেছি। পাখিদের কলরব আর কিচির মিচির শব্দে মনটা ভরে গেল। মুনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখতে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে আবার আসবো।
সামাজিক সংগঠন "নিরাপদ নওগাঁ" এর চেয়ারম্যান ও সংবাদকর্মী এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নদীতে আগত পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা প্রদানে নিরাপদ নওগাঁ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাখিদের বিচরন স্থানগুলোকে অভয়ারন্য হিসেবে ঘোষনা করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে।
মহাদেবপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, আত্রাই নদীতে যেসব স্থান পরিযায়ী পাখিদের অবাধ বিচরণ আছে সেই সব স্থানে যাতে কেউ নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করার কারণে পাখিদের অবাধ বিচরণে বাধাগ্রস্থ না হয় এবং কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে নজরদারি রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু হাসান বলেন, পরিযায়ী পাখিদের সুরক্ষা প্রদান এবং এদের আবাসস্থলকে নিরাপদ করার জন্য ইতিমধ্যেই প্রশাসন হতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।