দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মহামারী করোনা প্রতিরোধক কোভিট-১৯ এর ভ্যাকসিন দ্বিতীয় বুস্টার বা চতুর্থ ডোজ প্রদান শুরু করা হলেও ডোজ গ্রহণে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না মানুষের মাঝে।
কোভিট-১৯ প্রতিরোধক ভ্যাকসিনের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডোজ গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের যেমন আগ্রহ ও উৎসাহ থাকলেও ভ্যাকসিনের চতুর্থ ডোজ গ্রহণে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহী করতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর থেকে তেমন প্রচার-প্রচারণাও দেখা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মহামারির বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে দ্বিতীয় বুস্টার বা চতুর্থ ডোজ প্রদানে সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এতে ৬০ বছর এবং তদূর্ধ বয়সী দীর্ঘ মেয়াদি রোগে আক্রান্ত ১৮ বছর বয়সী স্বল্প রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সম্পন্ন জনগোষ্ঠী এবং গর্ভবর্তী নারী ও দুগ্ধপানকারি মা ও সম্মুখ সারির যোদ্ধারা এই ডোজ গ্রহণে আগ্রাধিকার পারেন। একই সঙ্গে তৃতীয় ডোজপ্রাপ্তির চার মাস অতিবাহিত হয়েছে এমন বক্তিকে এই চতুর্থ ডোজ প্রদান করা যাচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় বুস্টার বা চতুর্থ ডোজ প্রদান কার্যক্রম শুরুর এক মাস অতিবাহিত হলেও ফুলবাড়ীতে চতুর্থ ডোজ গ্রহণ করেছেন মাত্র এক শতাংশ মানুষ।
এদিকে গত বছরের১১ ডিসেম্বর তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বারক নং- স্বাঃঅধিঃ/ইপিআই/ইপিআই এ- সার্ভিল্যান্স/কোভিড-১৯/২০২২/২৭০ স্মারকের চিঠিতে দ্বিতীয় বুস্টার বা চতুর্থ ডোজ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রচার-প্রচারণার জন্য টিকা কেন্দ্রগুলোতে বুথের বাহিরে দৃশ্যমান স্থানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ব্যানার তৈরি ও প্রদর্শন করার নির্দেশনা থাকলেও গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১১ টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কোথাও কোনো ব্যানার দেখা মেলেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল। একই বছরের ২০ জুন থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়ে ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। বর্তমানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও কেউ আসে না পরীক্ষা করাতে। তবে উপজেলায় মোট করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৮৮২ জনের। এরমধ্যে পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ৭৮১ জন রোগী। সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৫৫০ জন এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র মতে, চলতি জানুয়ারি মাসের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাত ইউনিয়নে করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন এক লাখ ৭৫ হাজার ৪১৭ জন। একইভাবে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন এক লাখ ৫৫ হাজার একং তৃতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৯৩ হাজার ৩৯৯ জন। এতে উপজেলার মোট জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ প্রথম ডোজ, ৮০ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ এবং ৪৮ শতাংশ মানুষ তৃতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় বুস্টার বা চতুর্থ ডোজ গ্রহণ করেছেন মাত্র এক হাজার ৪৯৯ জন। যা মোট জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ফাইজার, বায়োটেক, ফাইজার কমিনিটি ও সিনোফার্মা’র টিকা প্রদান করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকা কেন্দ্রে চলতি বছরের গত ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় বুস্টার বা চতুর্থ ডোজ দেওয়া হয়েছে মাত্র এক হাজার ৪৯৯ জনকে। তবে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন টিকা গ্রহণ করছেন। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা মজুদ রয়েছে সাড়ে চার হাজার ডোজ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন সকাল ৯ থেকে ১ টা পর্যন্ত বিরতিহীনবাবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজের পাশাপাশি দ্বিতীয় বুস্টার বা চতুর্থ ডোজ প্রদান করা হচ্ছে। তবে চতুর্থ ডোজ গ্রহণে মানুষের আগ্রহ কম। করোনা না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে মানুষকে আগ্রহী করতে মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে। তবে সকলের সুরক্ষার জন্য চতুর্থ ডোজ গ্রহণ করা খুবই জরুরি।