চলতি মৌসুমে বিএডিসি-এর আওতায় শেরপুর জেলার নকলা জোনে রোপণকৃত বীজ আলুর পরীক্ষামূলক ফলন দেখে চাষির মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। দিগন্তজোড়া বিভিন্ন মাঠে সবুজ আলুর খেত ও বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখে বিএডিসি কর্মকর্তাসহ চুক্তিবদ্ধ চাষিরা বেজায় খুশি। বিএডিসি বীজ আলুর বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শন করে ও প্রাথমিক ফলন দেখে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারনা করছেন বিএডিসিতে কর্মরত স্থানীয় ও ঊর্ধ্বতন কৃষিবিদগণ। এতে করে বিএডিসি আলুর রপ্তানি বাড়বে, বাড়বে বহুমুখী ব্যবহার, এমনটাই মনে করছেন তাঁরা। গুণগত মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে বিএডিসি আলুর বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শনে গিয়ে চাষিদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিএডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ জেলা-উপজেলায় কর্মরত বিএডিসির কর্মকর্তাগণ। এর অংশ হিসেবে ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি বিএডিসি ঢাকার উপ-পরিচালক (মান নিয়ন্ত্রণ) কৃষিবিদ এএসএম খায়রুল হাসান শামীম, উপপরিচালক (বীপ্রস) কৃষিবিদ ড. মো. সাফায়েত হোসেন বীজ আলু উৎপাদনের বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শন করেন। এ সময় বিএডিসি হিমাগার নকলার উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. শহীদুল ইসলাম, উপসহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কইন্সটিটিউট জামালপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমানসহ অনেকে বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং গুনগত মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদনের লক্ষে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন তাঁরা।এছাড়া জমি তৈরীকরা থেকে শুরু করে রোপন, পরিচর্যাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সপ্তাহের সকল কর্ম দিবসে নিয়মিত কোনো-না-কোনো ব্লক পরিদর্শন করে চলছেন বিএডিসি হিমাগার নকলার উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. শহীদুল ইসলাম, উপসহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান। নিয়মিত বীজ আলুর ব্লক পরিদর্শন ও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে জানান স্থানীয় চুক্তিবদ্ধ বীজ আলু চাষিরা। বিএডিসি হিমাগার নকলার উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. শহীদুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৪টি ব্লকে চুক্তিবদ্ধ ২৬ জন কৃষকসহ অর্ধশতাধিক আলু চাষিকে নির্বাচন করে বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে ২৪৫ একর জমিতে বিএডিসির আওতায় বীজ আলু চাষ করা হয়েছে। এসব জমিতে প্রতি একরে ‘এ’ গ্রেডের ৬৪০ কেজি ও ‘বি’ গ্রেডের ৭২০ কেজি হারে মোট প্রায় ১৯০ মেট্রিক টন বিএডিসির আলু বীজ রোপণ করা হয়েছে। প্রতি একরে ৬ মেট্রিক টন হারে নকলা জোনের আওতায় ২৪৫ একর জমিতে ১,৪৫০ মেট্রিক টন বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে উৎপাদন আরো বাড়তে পারে বলে তারা আশা করছেন। বিএডিসি হিমাগার নকলার উপসহকারী পরিচালক (টিসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, এ বছর নকলা জোনে উচ্চ ফলনশীল এবং শিল্পে ব্যবহার উপযোগী ও রপ্তানিযোগ্য ডায়মন্ড, এস্টারিক্স, কার্ডিনাল, সানশাইন, সান্তানা, এলুইটি, রশিদা, লেডিরোসেটা জাতের বীজ আলু বেশি রোপণ করা হয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় বিএডিসি’র বীজআলু উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন চাষিরা।
আলু চাষিরা অধিক লাভবান হওয়ায়, বীজ আলু চাষির সংখ্যা ও পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পোলাদেশি এলাকার কৃষক হাকলিজুর রহমান, ভূরদীর ছাইদুল ও কামাল; চন্দ্রকোনার শফিক ও বানেশ্বরদীর জুয়েল মিয়াসহ অনেকেই জানান, বিএডিসি হিমাগারের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত আলুর মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শ সেবা দেওয়ায় তারা প্রতিবছর লাভবান হচ্ছেন। বীজ আলু চাষে লাভ বেশি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর আলু চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন তারা। আগামীতে আরো বাড়বে বলে চুক্তিবদ্ধ চাষিসহ বিএডিসির কর্মকর্তারা আশা ব্যক্ত করেন। জানা গেছে, বীজ আলুর বীজ মান অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বীজ আলু উৎপাদন, সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের নিমিত্ত আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন বীজ আলু প্লান্টার, গ্রেডার, ড্রায়ার ইত্যাদি যন্ত্রের মাধ্যমে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চুক্তিবদ্ধ চাষি, বেসরকারি বীজ উৎপাদনকারী ও ডিলারগণকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বীজ আলুর উৎপাদন ও বিপণনে জ্ঞান বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং চলমান আছে।এর অংশ হিসেবে বিদেশে চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহারযোগ্য আলুর আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিএডিসির ‘মান সম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ’ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খামারে ভিত্তি বীজআলু উৎপাদন করার পাশাপাশি নতুন জাতের উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য ট্রায়াল প্লট স্থাপন ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়াও এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ২৮টি জোনে চুক্তিবদ্ধ চাষির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে ব্যবহৃত ও প্রত্যায়িত বীজআলু উৎপাদন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় উচ্চ ফলনশীল, রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহার উপযোগী আলুর জাত পরিচিতি ও জনপ্রিয়করণের জন্য বিএডিসি আমদানিকৃত এবং বারি উদ্ভাবিত সম্ভামনাময় ২০টি জাত নিয়ে এ বছর সারাদেশে ৩০০টি প্রদর্শনী প্লট ও মাল্টিলোকেশন টেস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। আলু বীজ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতেও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ২৮টি জোনের ৩০টি হিমাগার রয়েছে- যার বর্তমান ধারণক্ষমতা মোট ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। বিএডিসির ‘মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ’ প্রকল্পের মেয়াদে ২ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন ৪টি হিমাগার নির্মাণ করা হবে। ফলে বিএডিসির বীজ আলুর সংরক্ষণ ক্ষমতা উন্নীত হবে ৫৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে বীজআলু উৎপাদন ৬০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।