বুধবার শুরু হতে যাচ্ছে বাঙ্গালির প্রাণের অমর একুশে বই মেলা। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ মেলা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। একুশে বইমেলা আমাদের মাতৃভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিকাশের অঙ্গীকারকে মনে করিয়ে দেয়। এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। ভাষার জন্য সেদিন যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের স্মৃতি অম্লান রাখতেই এই মেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। বর্তমানে যে পরিসরে একুশে বই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে তা শুরু হয় ১৯৮৪ সাল থেকে। একুশে বইমেলা পাঠক, লেখক ও প্রকাশকের মিলনমেলা। করোনার কারণে ছন্দপতন হলেও এ মেলার আবেদন একটুও কমেনি। গত বছর গ্রন্থমেলায় বিক্রি কম হলেও প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছিল বেশ উল্লেখ করার মতো। মানসম্মত বই মানুষকে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় উদ্বুদ্ধ করে। এ গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার বই প্রকাশিত হচ্ছে। পাঠক-প্রকাশক ও দর্শনার্থীদের আগমনে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমী, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্কসহ গোটা এলাকায় বিরাজ করে এক ভিন্ন চিত্র। মেলার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবার কারণে মেলার পরিসরও বাড়ছে। মাসব্যাপী মেলায় সমবেত হন দেশ-বিদেশের লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষানুরাগীরা। তবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সাংস্কৃতিক মিলন কেন্দ্র হলেও মাঝে মাঝে নানা অপসংস্কৃতিও এখানে ভর করছে। সে বিবেচনায় কিছুটা হলেও মেলার ঐতিহ্য ক্ষুণœ হয়। তার পরেও এই মেলার বাণিজ্যিক গুরুত্বকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই।
দেশের প্রকাশকদের সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে এ মেলা পরিগণিত হয়। এ বইমেলাকে উপলক্ষ করে বছরব্যাপী তাদের প্রস্তুতি থাকে। তবে এ মেলার প্রকাশিত বই নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কোন না কোন বিতর্ক উঠেছেই। তাই বইমেলার সার্বিক কাজকর্ম যাতে সফলভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। অতীতে লক্ষ করা গেছে, কর্তৃপক্ষের অসতর্কতার কারণে বইমেলায় এসে শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তাই এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বইমেলাকে কেন্দ্র করে দেশে মননশীলতার চর্চার যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে তা যেন আরও বেগবান হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। কেবল পুলিশের নজরদারি বা কর্তৃপক্ষের সতর্কতা এ ধরনের মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট নয়। সেজন্য সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে এবং সহযোগিতা করতে হবে। অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হোক বাঙালির প্রাণের উচ্ছ্বাসে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।