সাতক্ষীরায় হামলা-পাল্টা হামলায় পণ্ড হয়েছে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের প্রস্তুতি সভা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান দুদুর উপস্থিতিতে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের ২০ জনেরও অধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে সাতক্ষীরার আমতলা মোড়স্থ একটি কমিটিউনিটি সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, সাতক্ষীরার একটি কমিউিনিটি সেন্টারে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এড, সৈয়দ ইফতেখার আলীর সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। আগামী ৪টা ফেব্রুয়ারি খুলনার বিভাগীয় সমাবেশের জন্য সাতক্ষীরায় এ প্রস্তুতি সভা হচ্ছিল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আমন্ত্রিত নেতাদের বাইরে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী সভায় উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে বক্তব্য দিতে উঠেন জেলা বিএনপির সদস্য আইনুল ইসলাম নান্টা। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি সভার প্রধান অতিথির সামনে জেলা বিএনপির বর্তমান সংকট নিয়ে খোলা মেলা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। আইনুল ইসলাম নান্টা তার অনির্ধারিত বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে জেলায় বিভিন্ন পর্যায়ের যে কমিটি হচ্ছে, তার অধিকাংশ পকেট কমিটি। এমনকি কমিটি বানিজ্যেরও অভিযোগ করেন তিনি।
তার বক্তব্যের বিপরীতে কড়া ভাষায় সভার সঞ্চালক জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল আলিম নেতা-কর্মীদের অতীত ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, পাল্টাপাল্টি এমন অবস্থা চলতে লাগলে আমান হত্যার মতো ঘটনা ঘটতে পারে সাতক্ষীরায়। তার এই বক্তব্যের পরপরই শুরু হয় হৈ-চৈ, হট্টগোল ও চেয়ার ছোড়া-ছুড়ি। এ সময় ধাক্কাণ্ডধাক্কি ও হামলা-পাল্টা হামলায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে শামসুজ্জামান দুদুর বারবার আহবান সত্বেও পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে সদর থানার পরিদর্শক তারেকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশকে বেধড়ক লাটিচার্জ করতে দেখা যায়।
পুলিশ পরিদর্শক তারেক বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
সভায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির দায় কার, এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল ইসলাম হাবিব গ্রুপের অন্যতম নেতা জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক তারিকুল হাসান বলেন, আবদুল আলিমের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের জেরে আজকে কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতিতে এমন অঘটন ঘটলো। আবদুল আলিম তার বক্তব্যে বলেছেন, অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে, তাতে আমান হত্যার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তার এই বক্তব্যের পরপরই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তিনি আগামীতে দায়িত্বশীল নেতাদের আরও সংযত আচরণের পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল আলিম বলেন, এটা উল্লেখ করার মতো তেমন বিষয় নয়। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে সামান্য উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি স্পষ্টত দুভাগে বিভক্ত। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব। তিনি জেলে যাওয়ার পরে ওই অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম-আহবায়ক আবদুর রউফ। অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এড. সৈয়দ ইফতেখার আলী। এই দু’গ্রুপের দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। অতীতে এই দুগ্রুপের দ্বন্দ্বে শিল্পকলা একাডেমিতে খুন হন জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান। বর্তমানে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিগুলো দু’গ্রুপের ভিন্নভিন্ন জায়গায় পালন করতে দেখা যায়।