সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবেই পীরগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীতে দিনরাত হরিলুট হয়ে যাচ্ছে বালু। অথচ স্থানীয় প্রশাসন নানা ব্যস্ততার অযুহাতে হাত পা গুটিয়ে বসে আছে দীর্ঘ এক বছর ধরে। উত্তোলিত এই বালু পৃথক কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে নির্মানাধীন ৬ লেন এর মহাসড়কে। এই সিন্ডিকেট নিষিদ্ধ ড্রামট্রাক যোগে এসব বালু সরবরাহের মাধ্যমে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের সবক’টি সড়কযোগে এই বালু পরিবহন করায় ওই এলাকায় আন্তঃযোগেযোগ বিচ্ছিন্ন হবার পথে। ফেটে ভেঙ্গে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে এসব সড়ক।“পীরগঞ্জে বালু লুটের মহাযজ্ঞ” শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের কুয়েতপুর ও পার কুয়েতপুর গ্রামের টোংরারদহ ও ন্যংড়ারঘাট নামক স্থানে সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র বালু লুটের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। এখানে আনারুল,ওয়াসিম ওসাকিলসহ ৩৪ জন একটি বোমা মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে। পাশাপাশি রবিউল,সোহেলসহ ১২ জন মিলে পৃথক ১ টি মেশিনে ,জুয়েলসহ আরও কয়েকজন মিলে পৃথক আরও একটি মেশিন দিয়ে বালু তুলছে। পার কুয়েতপুর নামক স্থানেও কয়েকটি মেশিনে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এরা এলাকায় প্রভাবশালী। এদের মতো আরও অনেকেই বালু লুটছেন নদী থেকে। এ যেন মিলেমিশে বালু হরিলুটের উৎসব। কেউ প্রতিবাদ করলেই হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন। অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে রাস্তা, ঘাট, ফসলী জমি, বাড়ী ঘর ভাঙ্গলেও অসহায় সাধারণ মানুষ। সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে,পীরগঞ্জের পশ্চিম-দক্ষিন ধার ঘেঁষে চতরা ,বড়আলমপুর ও টুকুরিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদী। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও ড্রাম ট্রাকে বালু পরিবহনের কারণে পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভাঙ্গছে,ভাঙ্গছে ফসলী জমি,বাড়ি ঘর। ফলে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এ যেন এক মগের মুলুক। জোর যার, মুল্লুক তার ! জানা গেছে, রংপুর-দিনাজপুর জেলার পীরগঞ্জ,নবাবগঞ্জ,ঘোড়াঘাটের প্রায় ২৫টি গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। নদীটির তলদেশে বিভিন্ন স্থানে বোমা এবং স্যালোমেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের মাঝে অনেকটা প্রতিযোগিতা চলছে বলা চলে। কুয়েতপুর গ্রামের নদীপাড়েই কোটি কোটি টাকা মুল্যের হাজার হাজার ট্রাক বালুর মজুদ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা জানান, বালু তোলার কারণে চতরা ইউনিয়নের কুয়েতপুর -চতরা সড়কের ৩ কিলোমিটার পাকারাস্তা পুরোটাই ভেঙ্গে গেছে। কাঁচা অংশটুকুও ভেঙ্গে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষা মওসুমে এ রাস্তা দিয়ে যানবাহন তো দুরের কথা মানুষজনও পায়ে হেটে চলাচল করতে পারবে না। চতরা ইউপির চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন বলেন, কাকে কি বলবো সবাই আমার লোক ? বালু লুটের এই মহাযজ্ঞে স্থানীয় তহসীলদার নুর আলমও সরাসরি জড়িত মর্মে অভিযোগ রয়েছে। তিনি ওই এলাকায় প্রায় এক যুগ ধরে দায়িত্বরত। ফলে তার সব ধরনের ফাঁক ফোকর জানা আছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ইউএনও বিরোদা রানী রায় বলেন, আইনকে মান্য করা একজন নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। কিন্তু যারা তা অমান্য করে, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতসহ অবশ্যই নিয়মিত মামলা করা হবে। উল্লেখ্য,চতরা এলাকায় ২ বছর ধরে কোন প্রকার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে না রহস্যজনক কারনে।