রাজধানীসহ সারা দেশে রাস্তার খাবার বা স্ট্রিট ফুড দেখা মিলে সচরাচর সবখানেই। এসব খাবার খেতে অনেকেই বেশ পছন্দ করেন। সাধারণত রাস্তার ধারে এ ধরনের খাবার নিয়ে বসে ব্যবসায়ীরা। আর স্ট্রিট ফুড স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায় এবং মুখরোচক হয়ে থাকে বলে এর জনপ্রিয়তাও অনেক। রাজধানীর ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি মানুষ এসব খাবার খেয়ে থাকেন। কিন্তু অধিকাংশ দোকানের খাবার স্বাস্তসম্মত নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই রাস্তার খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে। বাংলাদেশে অধিকাংশ রাস্তার খাবার প্রস্তুত ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এসবের বালাই নেই। দূষিত পানি, ধুলাবালি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অধিকাংশ রাস্তার খাবারকে করে তুলেছে অনিরাপদ। ফলে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিন এসব খাবার খান, তাঁরা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। দিন দিন রাস্তার খাবারের চাহিদা বাড়ছে আর মান কমছে। এসব খাবারে যে পানি ব্যবহার করা হয়, সেটা সবচেয়ে ভয়াবহ। বিপুলসংখ্যক মানুষ এই খাবার খেলেও এটি নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। এই খাবার মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে, বিপণিবিতানের আশপাশে, অফিসপাড়া, বাণিজ্যিক এলাকাসহ অলিগলিতেও এখন নানা ধরনের রাস্তার খাবার পাওয়া যায়। নগরীর অনেক এলাকায় রাস্তার খাবারের অস্থায়ী দোকান বা ভ্যানও বসে। কিছু এলাকায় শুধু বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তার খাবারের দোকান খোলা থাকে। ঢাকার প্রায় সব স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বা কাছাকাছি রাস্তার খাবার বিক্রি হচ্ছে। ছুটি হতেই শিক্ষার্থীরা অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ে এসব দোকানে। সঙ্গে থাকা অভিভাবকদের অনেককেও এসব খাবার খেতে দেখা যায়। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক দূষণ ও জীবাণু সংক্রমণ বিষয়ে এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার প্রায় ৯০ শতাংশ রাস্তার খাবারেই ই-কোলাই, সালমোনেলা ও ইস্ট মোল্ডের মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া গেছে। স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলো সাধারণত খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। এসব খাবার পোকামাকড়, মাছি দ্বারা দূষিত হয়। সাধারণত সস্তা, তৈলাক্ত ও ঝাল হওয়ার কারণে রাস্তার খাবারের বেশ কদর রয়েছে। এ জাতীয় খাবার খেলে মানুষ যেসব রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, আলসার, হৃদরোগ ইত্যাদি। ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরের ৪৬টি থানায় অবস্থিত স্কুলের সামনে থেকে ৪৬টি ঝালমুড়ি, ৩০টি ফুচকা, ১৬টি ভেলপুরি ও ৪২টি আচারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনার মাইক্রো বায়োলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য ইস্ট ও মোল্ড, কলিফর্ম, সালমোনিলা, ই-কোলাইয়ের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। এতে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়িতে ই-কোলাইয়ের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তাই বাইরের এসব খাবার বর্জন করতে হবে। রাস্তার খাবার সাধারণত খোলা আকাশের নিচে বসানো হয় সে ক্ষেতে ব্যবসায়ীদের বা দোকানীদের খাবার ঢেকে রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থসম্মত বিষয়গুলোর প্রতি সচেতন হবে। পাশাপাশি ক্রেতাদের খাবার খাওয়ার আগে এসব বিষয় নিশ্চিত করে বুঝে খাওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও নজরদারী বাড়াতে হবে।