দেশে মার্সিডিজ-বেঞ্জ, অডি, ফোর্ড, ফেরারির মতো বিলাসবহুল গাড়ির চাহিদা বাড়ছে। তাছাড়া জাপানি প্রাডো, হ্যারিয়ার, টয়োটা করোলা ক্রসের মতো গাড়ির বাজারও অতীতের চেয়ে ভালো। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও গত বছর সব ধরনের গাড়ির রেকর্ডসংখ্যক বিলাসবহুল গাড়ির নিবন্ধন হয়েছে। মূলত দেশে গাড়ির ক্রেতা বাড়ছে। ফলে চাহিদাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তার প্রধান কারণ। বর্তমানে মানুষের আয় বাড়ায় ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে এদেশের মানুষ রেঞ্জ রোভার, মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউর মতো বিলাসবহুল গাড়ি চালাচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশে গাড়ির চাহিদা আরো বাড়বে। অটোমোবাইল খাত এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিআরটিএ ১৮০০ সিসি বা তার চেয়ে বেশি ইঞ্জিন সক্ষমতার প্রাইভেটকার ও জিপকে ‘ঘ’ সিরিজে নিবন্ধন দেয়। ২০২২ সালে ওই সিরিজের ১০ হাজার ২৩৬টি গাড়ির নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। আর আগের বছর নিবন্ধন নেয়া ওই ধরনের গাড়ির সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৬০২। বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও দেশে বিলাসবহুল গাড়ি নিবন্ধনে প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে গাড়ির নতুন ক্রেতার সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। আগে যারা স্টেশন ওয়াগন, এক্সিওর মতো তুলনামূলক কম দামের গাড়ি ব্যবহার করতো তাদের মধ্যে দামি গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। এক দশক আগেও দেশে ‘ঘ’ সিরিজের জিপ বা বিলাসবহুল গাড়ির বার্ষিক বিক্রি ও নিবন্ধনের পরিমাণ এক হাজারের আশপাশে ছিল। বিগত ২০১৩ সালে দেশে ১ হাজার ৩০৩টি ‘ঘ’ সিরিজের গাড়ি নিবন্ধন পেয়েছিল। পরের বছর সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৪৯-এ। আর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিলাসবহুল গাড়ি নিবন্ধনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ৫৬৪ ও ৪ হাজার ৮৬৯টি। আর ২০১৭ সালে ‘ঘ’ সিরিজের গাড়ি নিবন্ধন ৫ হাজারের গণ্ডি ছাড়ায়। ওই বছর বিআরটিএ মোট ৫ হাজার ৪১৯টি ‘ঘ’ সিরিজের গাড়ি নিবন্ধন দেয়। তারপর ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৫ হাজার ৫৪৭ ও ৫ হাজার ৬২৭-এ। তবে করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে অন্য সব গাড়ির মতো ‘ঘ’ সিরিজের গাড়ির নিবন্ধনও কিছুটা কমে যায়। ওই বছর ব্যবহারকারীরা বিআরটিএ থেকে ৪ হাজার ৯১১টি বিলাসবহুল গাড়ির নিবন্ধন নেয়। সূত্র আরো জানায়, সরকারই বাংলাদেশে ব্যক্তিগত গাড়ির (প্রাইভেট প্যাসেঞ্জার কার) অন্যতম বড় ক্রেতা। তবে গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও সংবিধিবদ্ধ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ডলার সংকট তীব্র হতে শুরু করলে ব্যাংকগুলো গাড়ি আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতেও গড়িমসি শুরু করে। বর্তমানে গাড়ি আমদানির এলসি খোলা প্রায় বন্ধ। আর তাতে শতভাগ মার্জিন নীতি আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের এমন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের মধ্যেও দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি বেড়েছে। শুধু বিলাসবহুল বা ব্যক্তিগত গাড়ি নয়, সামগ্রিকভাবে দেশে সব ধরনের গাড়ির নিবন্ধনই প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে গাড়ি ব্যবসায়ীদের মতে, দেশে গাড়ি নিবন্ধন ও বিক্রিতে আরো প্রবৃদ্ধি হওয়া উচিত। বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনুপাতে গাড়ি ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনো অনেক কম। যে হারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে গাড়ি নিবন্ধন ও বিক্রি আরো বেশি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু গাড়ি আমদানি ও বিক্রিতে সরকারি বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে দেশে গাড়ির বাজার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) মহাসচিব মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের বাজারে ইউরোপ বা আমেরিকান গাড়ি ক্রেতা এখনো তুলনামূলক কম। বিপরীতে জাপানি গাড়ির বাজারটি বেশ ভালো হচ্ছে। বিএমডব্লিউ, ফোর্ড বা মার্সিডিজ-বেঞ্জের একটি গাড়ির দাম কয়েক কোটি টাকা। আর ৬০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যেই এসইউভি মানের জাপানি গাড়ি পাওয়া যায়। গাড়ির চাহিদার ক্ষেত্রে দামের বিষয়টি মুখ্য ভূমিকা পালন করে, যা জাপানি গাড়িগুলোকে সুবিধাজনক অবস্থায় রেখেছে।