মহান ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছরেও সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বেশিরভাগ স্কুল-কলেজে গড়ে ওঠেনি শহিদ মিনার। এ ছাড়া উপজেলার মাদ্রাসা গুলোতে নেই একটিও শহিদ মিনার। যদিও কলারোয়া পৌর সদরের আলিয়া মাদ্রাসায় একটি শহিদ মিনার নির্মাণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যা জেলা পরিষদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো-উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টি ইউনিয়নের কোথাও আজও স্থাপন করা হয়নি একটিও শহিদ মিনার। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কলারোয়া পৌরসভা ও উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে শহিদ মিনার রয়েছে মাত্র ৩৪টি। এর মধ্যে কলারোয়া ফুটবল ময়দানে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, কলারোয়া সরকারি কলেজ, শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রী কলেজ, বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ, কলারোয়া সরকারি প্রাইমারি স্কুল, তুলসীডাঙ্গা সরকারি প্রাইমারি স্কুল, গোপীনাথপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল, কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুল-এই ৮টি শহিদ মিনার কলারোয়া পৌরসভার মধ্যে হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্মিত শহিদ মিনার রয়েছে-হেলাতলা ইউনিয়নের দমদম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হেলাতলা আইডিয়াল হাইস্কুল, কাজীরহাট হাইস্কুল, ঝাঁপাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়নগর ইউনিয়নের সরসকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরসকাটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জয়নগর বদরুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় ও ধানদিয়া হাইস্কুল, দেয়াড়া ইউনিয়নের খোরদো হাইস্কুল, দেয়াড়া হাইস্কুল, কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের পানিকাউরিয়া হাইস্কুল, কেরালকাতা ইউনিয়নের কেকেইপি হাইস্কুল, চন্দনপুর ইউনিয়নের গয়ড়া বাজার, চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজ, চন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, বয়ারডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চান্দুড়িয়া কেসিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হিজলদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের সোনাবাড়িয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, সোনাবাড়িয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সোনাবাড়িয়া সোনার বাংলা ডিগ্রী কলেজ ও বিবিআরএনএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কেঁড়াগাছির বোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লাঙ্গলঝাড়ার কেএল হাইস্কুল, যুগিখালি ইউনিয়নের বামনখালি হাইস্কুল। এর মধ্যে উপজেলার কয়লা ও জালালাবাদ ইউনিয়নে কোনো শহিদ মিনার নেই বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। গতবছর কয়লা হাইস্কুলে একটি শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য ভিত্তি স্থাপন করা হলেও তার নির্মাণ কাজ আজও পর্যন্ত শেষ হয়নি। সূত্র আরো জানায়, উপজেলায় ৩৪টি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা রয়েছে। যার মধ্যে সিনিয়র মাদ্রাসার সংখ্যা ৫টি। এসব মাদ্রাসার কোথাও গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়নি একটিও শহিদ মিনার। তবে হতাশার বিষয় হলো- উপজেলার ১২টি বেসরকারি কলেজের মধ্যে ৭টি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হয়নি কোন শহিদ মিনার। কলারোয়া সরকারি কলেজ, শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রী কলেজ, বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ, চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজ ও সোনাবাড়িয়া সোনার বাংলা ডিগ্রী কলেজ ক্যাম্পাসে কেবলমাত্র শহিদ মিনার রয়েছে। এমআর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান নিজ অর্থায়নে কয়েক বছর আগে কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া হাইস্কুল, হেলাতলা হাইস্কুল, কেকেইপি হাইস্কুল, চন্দনপুর কলেজ ক্যাম্পাসে শহিদ মিনার তৈরি করিয়েছিলেন। এ ছাড়া কলারোয়া ফুটবল মযদানে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও শহিদ মিনার তাঁরই অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়। এ প্রজন্মের অনেক শিক্ষার্থী কলেজে এসে ক্যাম্পাসে শহিদ মিনার দেখছে না। শহিদ মিনারবিহীন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহিদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে পারে না। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেসরকারি কলেজের চেয়ে শহিদ মিনার নির্মাণের দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কেননা, উপজেলার ১৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার রয়েছে। অপরদিকে উপজেলার ১২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহিদ মিনার রয়েছে কলারোয়া, গোপীনাথপুর, রঘুনাথপুর, ঝাঁপাঘাট ও বয়ারডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সাতক্ষীরা জেলার ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব ভাষা সৈনিক প্রয়াত আলহাজ্ব শেখ আমানুল্লাহ তাঁর জীবদ্দশায় অনেক অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার গড়ে তোলার কথা বলতেন। তিনি প্রয়াত হয়েছেন ৮বছর। কিন্তু তাঁর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন আজও হয়নি। আমরা এই ভাষা সৈনিকের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা দেখাতে পারি না। এর জন্য প্রয়োজন উদ্যোগ ও সমণি¦ত প্রয়াস। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ও নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেম-ভাষাপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে সকল শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলার দরকার শহিদ মিনার। এমনটি মনে করেন ভাষাপ্রেমী মানুষ।