দেশজুড়ে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। রাজধানীসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা, এমনকি থানা শহরেও রয়েছে এর শাখা ও প্রশাখার বিস্তার। সারাদেশে বড় ও ছোট মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ কোচিং সেন্টার রয়েছে। প্রতিবছর কোচিংয়ে লেনদেন হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না শিক্ষা ধ্বংসের এই আত্মঘাতী প্রবণতা।স্কুল-কলেজের ৯৭ শতাংশই বেসরকারি, বাকি ৩ ভাগ সরকারি। এই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অসাধু ও বেপরোয়া শিক্ষকদের কাছে রীতিমতো জিম্মি শিক্ষার্থী-অভিভাবক। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শ্রেণীকক্ষের আদলে কোচিং সেন্টারগুলোতেই চলছে পাঠদান। ২০১১ সালের উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ দেওয়ার ঠিক পরের বছরই একটি নীতিমালা জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি ছিল শিক্ষকদের ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা নিয়ে। এটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ ঐ বছরের ২০ জুন এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়। কিন্তু নীতিমালা জারির ১১ বছর পর ২০২৩-এ এসে দেখা গেল, মাঠ পর্যায়ে এই নীতিমালা বাস্তবায়নের হার শূন্য ভাগ,নেই কোনো মনিটরিং কার্যক্রমও। কোচিং বাণিজ্য নামের এই ‘ঘাতক ব্যাধি’ আজ মহামারী রূপ পেয়েছে,এটা মাদকের মতো। ২০১২ সালে নীতিমালা জারির পর নীতিমালা বাস্তবায়নের তোড়জোড় দেখা দেয়। এই নীতিমালা ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য কেন্দ্রীয়, বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু এই তোড়জোড় ছিল সর্বোচ্চ ছয় মাস,এরপর থেমে যায় বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং কার্যক্রমও। প্রাইভেট টিউশনিতে শিক্ষকরা জড়িত-মনিটরিং কমিটি এমন অভিযোগ করলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। এই বছর থেকে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে, পরের বছর অষ্টম-নবমে এবং ২০২৫ সালে দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হচ্ছে। ২০২৫ সালের পর থেকে আমরা সব ক্লাসে নতুন শিক্ষাক্রমে যেতে পারব। তখন যে ধরনের শিক্ষাক্রম হবে, সেখানে শেখানোর পদ্ধতি যে রকম হবে, তাতে আর কোচিংয়ের প্রয়োজন থাকবে না। সেখানে এসএসসি, এইচএসসির কোচিংয়ের প্রয়োজন হবে না। প্রি-প্রাইমারি থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত ২০২৫ সালের পরে আর কোচিংয়ের প্রয়োজন হবে না। এ ঘোষণা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে সেটার দেখার বিষয়। রাজধানীর বেইলি রোড, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে কোচিং বাণিজ্য দিন দিন রমরমা হয়ে উঠছে। শুধু যে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় পাস বা ভালো ফলের জন্য কোচিং বাণিজ্যের প্রসার, তাই নয়। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষাও এই কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। শিক্ষার্থীদের ওপর ভার তৈরির শিক্ষানীতিও ওই বাণিজ্য প্রসারের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে কোচিংয়ের পরিণামে শিক্ষার সার্বিক মান হ্রাস পাঁচ্ছে। একবারে সারাদেশের কোচিং বন্ধ করা সম্ভব নয় তাই কোচিংকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। অতি দ্রুত বাংলাদেশের সব স্কুল, কলেজভিত্তিক কোচিং বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বেসরকারি স্কুল ও কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আরও অধিক নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে আর তাহলেই এই কোচিং নামের এই ভাইরাস থেকে দেশ ও জাঁতি মুক্তি পাবে।