গরু দিয়ে ঘানি টেনে সরিষার তেল বের করার পদ্ধতি বেশি পরিচিত। কম সময়ে বেশি সরষে ভাঙাতে বিদ্যুচ্চালিত মোটরের সাহায্য অনেকে নেন। তবে শেরপুরের নকলার মো. জিয়ার আলী (৩২) নামের এক যুবক গরুর বদলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টেনে তেল বের করছেন। স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে তার ওই উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলেছে।
জানা যায়, উপজেলার চরমধুয়া গ্রামের আবদুল হালিম ব্যাপারীর ছেলে জিয়ার আলী। বংশপরম্পরায় ঘানি থেকে সরষের তেল উৎপাদন ও বিক্রি করা তাদের ব্যবসা। সেই ব্যবসায় নতুনত্ব এনেছেন জিয়ার আলী। ব্যবসার আরও প্রসার ঘটিয়ে আর্থিক লাভের মুখ দেখতে চান তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিনের চাল দেওয়া একটি খোলা ঘরের মাঝখানে একটি মোটা কাঠের ডোম স্থাপন করা হয়েছে। ওই ডোমের ওপর একটি গোল ডালা বসানো। এর ওপর আছে ঢেঁকি আকৃতির কাঠের ‘জাঁতা’। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে জাঁতাটি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তেল উৎপাদনের জন্য কাঠের ডালাটিতে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সরিষা। এরপর সুইচ টিপে চালু করা হয় অটোরিকশাটি। সেটি ঘুরছে আর জাঁতার চাপে ডালায় থাকা সরষিাগুলো ভেঙে নিচ দিয়ে তেল হয়ে বের হচ্ছে। এসব তেল ছাঁকনির সাহায্যে পরিশোধন করে একটি ডেকচিতে রাখা হয়। পরে বোতলে ভরে তা ভোক্তার কাছে বিক্রি করা হয়।
অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টানানোর বিষয়ে জিয়ার আলী বলেন, ইউটিউবে দেখে তিনি এ ধরনের তেলের ঘানি তৈরি করতে উৎসাহী হন। এ ব্যবসায় তিনি প্রায় এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ৫ কেজি সরিষা ভাঙলে দেড় কেজি তেল পাওয়া যায়। বর্তমানে বাজার থেকে ১শ টাকা কেজি দরে সরিষা কিনছেন। সে হিসাবে ৫ কেজি সরষে কিনতে লাগে ৫শ টাকা। উৎপাদিত তেল বিক্রি করেন প্রতি লিটার ৪শ টাকায়। অর্থাৎ দেড় লিটার তেল বিক্রি করে পান ৬শ টাকা। সে হিসাবে তার প্রতি লিটারে লাভ হয় ১শ টাকা। এ ছাড়া সরিষা ভাঙানোর সময় যে খৈল পাওয়া যায়, তা বিক্রি করেও আরও কিছু টাকা পান। বর্তমানে তার ঘানিতে প্রতিদিন ২০-২৫ কেজি সরষে ভাঙেন। এখান থেকে আগ্রহী ক্রেতারা তেল কিনে নিয়ে যান। তেল বিক্রি করতে তাকে বাজারে যেতে হয় না। আবার অনেকে সরিষা নিয়ে আসেন। তাদের তেল করে দেন তিনি। এজন্য বাড়তি কোনো টাকা নেন না, তবে খৈলটুকু রেখে দেন। সেটাই তার লাভ। ব্যবসার প্রসারে তিনি সরকারি সহায়তা চান।
এ ব্যপারে নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ বলেন, জিয়ার আলীর সাফল্যের কথা শুনেছি। আবেদন পেলে তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।