শারিরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে পা দিয়ে লিখে এবার আলিম পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫৭ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন মেধাবী হাবিবুর রহমান হাবিব।
হাবিব রাজবাড়ী কালুখালীর হিমায়েতখালি গ্রামের কৃষক আবদুস সামাদের ছেলে। এবং তিনি পাংশার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা থেকে পা দিয়েই লিখে এবার আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তির্ন হয়। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য জানান মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাঈদ আহম্মেদ।
খোজ নিয়ে জানাযায়, দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হাবিবুর রহমান। চার ভাই বোনের মধ্যে হাবিব তৃতীয়। তিন বোনের মধ্যে বড় দুই বোনের বিয়ে হলেও পরিবারে রয়েছে ছোট বোন। সেও পড়াশুনা করে। জন্ম লগ্ন থেকেই হাবিবের দুই হাত নাই। ছোট বেলায় বাবা-মা, চাচা ও পরিবারের অন্যান্যদের অনুপ্রেরনায় পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করে হাবিব। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের প্রবেশ করে। শিক্ষা জীবনের প্রথম স্তরেই সে কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পা দিয়ে লিখে পিএসসিতে ৪.৬৭ পেয়ে পাশ করেন। এরপর শুরু হয় মাধ্যমকি শিক্ষা জীবনের দ্বিতীয় স্তর। বাড়ী থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দুরের পাংশার উপজেলার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা। সেখান থেকে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪.৬১ পেয়ে কৃতিত্তের সাথে পাশ করে। পরবর্তী আর পেছন ফিরে না তাকিয়ে একই মাদ্রাসা থেকে ২০১৯ সালে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পায় জিপিএ- ৪.৬৩ হাবিব। এরপর শিক্ষক, সুধিজনসহ বিভিন্নজনের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরনায় আলিমে ভর্তি হয হাবিব।
মেধাবী হাবিবুর রহমান বলেন, ছোট বেলা থেকে পা দিয়ে লিখে খুব কষ্ট করে পড়াশুনা করছেন। দাখিল পরীক্ষার পর মাদ্রাসার শিক্ষক এবং কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হকের সহযোগিতায় পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আলিম পরীক্ষায় আশা ছিলো জিপিএ ৫ পাবেন। কিন্তু পেয়েছেন ৪.৫৭। তারপরও তিনি খুশি। এখন তার লক্ষ্য ইসলামি ইউনির্ভার সিটিতে ভর্তি হবার। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। পড়াশুনা করে প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। এবং প্রতিষ্ঠিত হয়ে তার অসহায় পরিবারের পাশে দাড়াতে চান তিনি।
পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাঈদ আহম্মেদ বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হাবিব। তবে সে অত্যান্ত মেধাবী। ফলে প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে এবারের আলিম পরীক্ষায় কৃতিত্ত দেখিয়েছেন। সে পেয়েছে ৪.৫৭। পা দিয়ে লিখে এইরকম রেজাল্ট করা সত্যি কষ্টকর। আসলে তার চেষ্টায় সে এগিয়ে যাচ্ছে। হাবিবের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে মাদ্রাসা ও তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সহযোগিতা করেছেন। আগামীতে উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করবেন।
তিনি আরও বলেন, তার মাদ্রাসা থেকে এবার ২২জন শিক্ষার্থী আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই অর্থাৎ শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। এরমধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩ জন। শিক্ষার্থীদের চেষ্টা ও শিক্ষকদের পরিশ্রমে তার মাদ্রাসা থেকে শতভাগ পাশ করেছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবেন।