জীবনে আরগ্য লাভের জন্য যেমন ঔষুধ প্রয়োজন, তেমনি জীবন সাজাতে প্রসাধনীর আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। অনেক দেরিতে হলেও নকল ঔষুধ উৎপাদন, জ্ঞাতসারে বিক্রি,মজুত, বিতরণ বা বিক্রি করলে শান্তির সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য ঔষুধ ও কসমেটিক আইন- ২০২৩ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। গত ছ’ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার নিয়মিত বৈঠকে এ আইনের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। প্রস্তাবিত আইনে প্রথমে শুধু ঔষুধ বিষয়ক থাকলেও শেষে তাতে কসমেটিক বিষয়টি যুক্ত করা হয়। ফলে এখন কসমেটিক উৎপাদনের জন্যও ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সের শতের বাইরে গিয়ে ঔষুধ উৎপাদন, নিবন্ধন ছাড়া ঔষুধ উৎপাদন, আমদানি রপ্তানি, মজুদ বা প্রদর্শন এবং সরকারি ঔষুধ বিক্রি বা মজুদ বা প্রদর্শন করলেও ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। জীবন বাঁচাতে যে ঔষুধ তা যদি হয় ভেজাল বা নকল তবে তা জীবন নাশকও হতে পারে। তাই আইনে যে শাস্তি রাখা হয়েছে, তা লঘু দণ্ড বলেই মনে হচ্ছে। তবে জাতীয় সংসদে আইনটি পাশের প্রাক্কালে সংসদীয় কমিটি বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আশা করা যায়। বাংলাদেশে অনেকেই নিবন্ধিত চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে নিজে নিজেই ঔষুধ সেবন করে থাকেন। বিষয়টি অনেকদিন থেকে আলোচিত হলেও এদিকে কেউ নজর দেন নি। তবে প্রস্তাবিত আইনে নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবাইটিক বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধের বিধান রাখা হয়েছে। বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তির আওতায় আনা হবে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া যে কোনো ঔষুধ বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। প্রস্তাবিত আইনে মোট ৩০ ধরনের অপরাধের জন্য বিভিন্ন মাত্রায় শাস্তি রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশে বিদেশী ঔষধের নামে নকল অনেক ঔষুধ বাজারে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে অনেক দিন থেকে। এ ছাড়া ভেজাল ঔষুধ বাজারে পাওয়া যায় বলে শোনা যায়। মাঝে মধ্যে এসব ঔষুধ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা খোঁজ খবর নিয়ে উদ্ধারও করেছেন। কিন্তু ঔষধের বাজারে কালো বাজারি এসব ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। কাজেই প্রস্তাবিত আইনটি পাশ হলে এবং যথাযথ প্রয়োগ করা হলে নকল ও ভেজাল ঔষুধ বাজার থেকে হারিয়ে যাবে। চিকিৎসকরা যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারবেন রোগীদের এবং তারা সুস্থ হয়ে উঠবেন। আজ মানুষের মানবিকতা এতটাই নষ্ট হয়েছে যে তারা টাকা কামাতে মানুষকে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে দেয়। তাই আমরা মনে করি, এ আইটি যথাযথ প্রয়োজন রয়েছে এবং তা যতদ্রুত সম্ভব সংসদে পাশ করা উচিৎ। একই ভাবে কসমেটিক বা প্রসাধনীর ক্ষেত্রেও আইনটি জরুরি। দেশে বিদেশী প্রসাধনীর মোড়কে নকল প্রসাধনী পাওয়া যায়। যথাযথ উপাদানের অভাবে তা ব্যবহার করলে চর্মরোগ দেখা দেয় বা চামড়ার ক্ষতি সাধনসহ চামড়ার রং পরিবর্তন করে ফেলে। ফলে প্রসাধনী উৎপাদনের জন্য ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক করায় মানুষ নকল ও ভেজাল প্রসাধন থেকে অনেকটাই রক্ষা পাবে। আমরা এ আইনকে স্বাগত জানাই। মানুষের সুস্থ শরীর ও সুন্দর জীবন আমাদের প্রত্যাশা।