দুই দশকের বেশি সময় ধরে ইসলামের নামে জঙ্গিদের উত্থান সারা বিশ্বেই উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে। বাংলাদেশেও হুজি, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-এমন সব নামে জঙ্গিরা তৎপরতা চালিয়েছে। তাদের হামলায় বহু নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে। আইন-শৃৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীরও অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। বর্তমানে জঙ্গিদের তৎপরতা কমলেও অনেকেই নানা জায়গায় ঘাপটি মেরে রয়েছে। নতুন নামে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডের যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো। গত মঙ্গলবার বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে বিশেষ অভিযান চালিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। টাকাসহ উদ্ধার করেছে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্য ও অন্য তিনজন পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সদস্য। মহাপরিচালক জানিয়েছেন, র্যাবের জঙ্গিবিরোধী অভিযান এখনো শেষ হয়নি। এখনো আরো জঙ্গি দুর্গম পাহাড়ে লুকিয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জঙ্গি সংগঠন হুজি ও আনসার-আল-ইসলামের মতো জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুনর্গঠিত হয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নব্য জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে র্যাব মহাপরিচালক ধারণা করছেন। তাঁর ধারণা অমূলক নয়। গত মাসেও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় সীমান্তবর্তী বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানিয়েছিল, তাঁরা সবাই জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ সদস্য এবং তাঁরা পাহাড়ি এলাকায় সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। ওই সময় র্যাব আরো জানিয়েছিল, অর্থের বিনিময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ বা ‘কেএনএফ’ জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। গত বছর নভেম্বরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) ভারী অস্ত্র কিনতে টাকা দিচ্ছে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। গত বছর প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে ভারী অস্ত্র কিনতে টাকা দিচ্ছে। সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যাংকিং চ্যানেল ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় জঙ্গি দমনের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। জনবল ও প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। তাদের হাতে উন্নত প্রযুক্তি দিতে হবে। জঙ্গি অর্থায়ন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি জঙ্গিবিরোধী জনসচেতনতা বাড়াতে হবে এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে তাদের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আরো বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে।