আমাদের দেশে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইন থাকলেও নেই যথাযথ প্রয়োগ। যাদের দ্বারা শিশুরা সুরক্ষিত নিরাপদ থাকার কথা, তাদের হাতেই বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শিশু প্রতিনিয়ত সহিংসতা এবং শোষণের শিকার হচ্ছে। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে শিশু নির্যাতনের খবর। এখন শিশু নির্যাতন শুধু ঘরে বাইরে নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও হচ্ছে শিশু নির্যাতন। সুযোগ সুবিধা থেকেই বঞ্চিত দরিদ্র শ্রমজীবী শিশুদের অবস্থা আরও করুন। শিশু নির্যাতনের মতো ভয়াবহ পরিণতিতে সবচেয়ে বেশি সম্মুখীন হন কন্যা শিশুরা। এ শারীরিক নির্যাতনের অন্যতম কারণ হচ্ছে যৌন নির্যাতন। তাই শিশু নির্যাতনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন এবং শিশুর প্রতি সবধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। ২০০০ সালে সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন মূলক অপরাধ দমনে আইন প্রণয়ন করেন এবং ২০০৩ সালে এটি সংশোধিত হয়। তারপরেও যেন ক্রমে ক্রমে শিশু নির্যাতনের মতো জঘন্য ঘটনা বেড়েই চলছে। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে অপরাধ কারীরা নৃশংস ও নির্মম অপরাধের অনুকরণ করে অসুস্থ বিনোদনে মেতে উঠছে। সাম্প্রতিক সময়ে শিশু নির্যাতনের বেশ কিছু ঘটনা প্রকাশিত হলে দেখা যায়, ওই ঘটনাগুলোতে শিশুদের প্রতি নিদয় ও নিষ্ঠুর আচরণের প্রকাশ পাঁচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে ধর্ষণ, যৌন হয়রানী ছাড়াও পরিবার ও শিক্ষকদের দ্বারাও শিশুরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকদের শিক্ষার বিষয়ে যতটা না আগ্রহী করা হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি নম্বরের পেছনে ছোটানো হয়। কারণ স্কুলের ফলা ফলের ওপরে তাদের সরকারি সুযোগ সুবিধা নিভর করে। অন্যদিকে মা বাবারা আতঙ্কিত থাকেন, রেজাল্ট ভালো না হলে ভালো প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও ভালো চাকরি মিলবে না। অভিভাবকদের এসব আতঙ্কেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যবহারের মাধ্যমে। শাস্তি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বাইরেও শিক্ষার্থীকে অন্যমনস্ক করে তোলে, ফলে তারা লেখা-পড়ায় মনোবল হারিয়ে মেধা বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। এমনকি আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা যেন নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে এমন নির্যাতনের ঘটনাগুলো বেশির ভাগই ঘটছে মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে। যা শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের এমন নির্মম আচরণ কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই শিক্ষক অভিভাবক সবাইকে শিশু নির্যাতন করার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। জনসচেতনতা, সামাজিক প্রতিরোধ, আইনের কঠোর প্রয়োগ, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং প্রকৃত দোষীরা বিচারের হাত থেকে যাতে রেহাই না পায় তার সঠিক ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে হয়তো শিশুদের অনেকটা সুরক্ষা দেয়া সম্ভব হবে।