কবর দেওয়ার জন্য নয়, কবর সংরক্ষণকে নিরুৎসাহিত করতে ফি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন কবরস্থানে কবর দেওয়ার ফি বাড়ানো হয়নি। কবর সংরক্ষণের জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে। কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত করতেই মূলত সংরক্ষণ ফি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক আবেদন আসে কবর সংরক্ষণের জন্য। এভাবে কবর সংরক্ষণ করা হলে কবর দেওয়ার জায়গা কমে যাবে। আশা করছি, ফি বৃদ্ধির কারণে কবর সংরক্ষণের আবেদন অনেক কমবে এবং সাধারণ মানুষ কবর দেওয়ার সুযোগ পাবে। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় ডিএনসিসির উন্নয়নকৃত উত্তরা ৪নং সেক্টর কবরস্থান উদ্বোধনকালে মেয়র এসব কথা বলেন। ডিএনসিসির কবরস্থানে নগরের বাসিন্দারা সীমিত ফিতে দাফনের সুযোগ পাঁচ্ছে উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনসিসির আওতাধীন কবরস্থানে প্রতিটি মৃতদেহ দাফন বাবদ রেজিস্ট্রেশন ফি মাত্র ৫০ টাকা। দুস্থ, অসহায় মৃত ব্যক্তির দাফনের ফি মাত্র ১০০ টাকা। কেউ যদি ১০০ টাকাও পরিশোধ করতে অপারগ হন, তার জন্য বিনামূল্যে দাফনের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কবরস্থানসহ অন্যান্য স্থাপনা মেইনটেন্সের জন্য সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি জনগণকে, কমিউনিটিকে এগিয়ে আসতে হবে। এলাকাবাসী ও সোসাইটির নেতৃত্বে সিটি করপোরেশনের স্থাপনা, ফুটপাত, মাঠ, পার্কগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। নির্মাণকাজের জন্য গাছ কাটা যাবে না। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি গাছ না কেটে কাজ শেষ করতে। আমরা সাধারণত একটি গাছ কেটে তিনটি গাছ লাগানোর কথা বলি। কিন্তু এখন বলছি গাছ না কেটেই তিনটি গাছ লাগাবেন। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘মহামারি করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যখন পুরো বিশ্ব বিপর্যস্ত, তখনও আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সীমিত সম্পদের মধ্যে সর্বোচ্চ কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ১৮টি নতুন ওয়ার্ডেও আমরা উন্নয়নকাজ শুরু করেছি। নতুন এলাকায় সবকিছু মাস্টারপ্ল্যান করে চার হাজার ২৫ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছি। অনেক বড় প্রকল্প তাই একটু সময় লাগছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য সময় নিয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’ এ সময় ডিএনসিসির আওতাধীন কবরগুলোর ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা হবে বলেও ঘোষণা দেন মেয়র।
উত্তরা ৪নং সেক্টর কবরস্থানে যা আছে: কবরস্থানের চতুর্দিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী, মার্বেল ফ্লোরসহ দৃষ্টিনন্দন দোতলা মসজিদ ভবন, কবরস্থান পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি আধুনিক অফিস ভবন, প্রয়োজনীয় ওজুখানা ও পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ ওয়ার্কওয়ে (৮০০ মিটার), পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক লাইটিং ব্যবস্থা, রোদণ্ডবৃষ্টির জন্য কবরস্থানের অভ্যন্তরে পাঁচটি ওয়াক-ওয়ে, মৃত ব্যক্তির গোসলের সুব্যবস্থা, জানাজার জন্য খাটিয়া রাখার আলাদা প্ল্যাটফর্ম, দৃষ্টিনন্দন প্রবেশ গেট, কবরস্থানের পূর্ব ও পশ্চিমে এলাকাবাসীর সুবিধার জন্য অতিরিক্ত দুটি পকেট গেট, কবরস্থানে চারিদিকে বাউন্ডারি ফেন্সে আররি হরফে সুদৃশ্য ক্যালিওগ্রাফি, কবরস্থানের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও অন্যান্য গাছ (প্রায় ৭০০টি), বাইরে চারদিকে পায়ে হাঁটার পথসহ অন্যান্য সুবিধা। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জুলকার নায়ন, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আফছার উদ্দিন খান, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরী, স্থপতি ইকবাল হাবিব, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি আনিসুর রহমান প্রমুখ।