সমিতি থেকে ঋণ তুলে ১বিঘা ৫ কাঠা জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন সুশীলা দাস। চারা রোপনের পর সেই চারাগাছ বেড়ে উঠছিলো স্বাভাবিক নিয়মেই। চারাগাছ বেড়ে উঠার সাথে সাথে স্বপ্নও উঁকি দিচ্ছিল কৃষাণির মনে। আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎ করেই নলক’পের মালিকের স্বেচ্ছাচারিতায় জমিতে পানি না পেয়ে সে চারা গাছ মরে মাটিতে মিশে গেছে। নষ্ট হয়েছে আরো অনেকের বোরোর ক্ষেত। কথাগুলো চরম আক্ষেপের সুরে বলছিলেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের মাদারীপুর গ্রামের কৃষাণী (বোরো চাষি) সুশীলা দাস।
তিনি বলেন, “কত কষ্ট করে জমি কট নিয়ে ঋনমহাজন করে বোরোর ক্ষেত তৈরী করে তাতে চারা লাগিয়েছিলাম। ক্ষেত তৈরী করে চারা রোপন করতে প্রায় দশ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে তার। কিন্তু চারা রোপনের পরপরই রহস্যজনক করনে নলক’প মালিক নাসিরুল জমিতে পানি দেয়া বন্ধ করে দেয়। এতে করে বোরো ক্ষেতের পানি শুকিয়ে চারাগাছগুলো বিবর্ণ হয়ে মরার উপক্রম হয়ে পড়েছে। জমির এমন দশা দেখে পেটে ভাত ঢুকছে আর।”
শুধু সুশীলাই নয়, এমন পরিস্থিতির শিকার বোরো চাষি শ্রী সরেন, এনামুলসহ আরো অনেকে। ওই নলকুপের আওতায় বোরো চাষিদের অনেকের অভিযোগ, সেচযন্ত্রের মালিক নাসিরুল নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী বেশি টাকা আদায় করছেন সেচ দিতে। এর প্রতিবাদ করায় ঠিকমত পানি পাঁচ্ছেনা তারা।
অপরদিকে, সেচ যন্ত্রের মালিকরা কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, বিদ্যুতের লোড শেডিং এর কারণে চাহিদামত বোরোর জমিতে সেচ দিতে পারছেননা তারা। এছাড়াও এবার মাঠে অধিক পরিমান সষিার আবাদ থাকায়, সে জমিগুলোতে সরিষা কাটা শেষ হয়েছে প্রায় একই সঙ্গে। ওই সকল জমিগুলোতে বোরো চাষের লক্ষ্যে জমি তৈরি শুরু করেছেন চাষিরা। বোরো চাষের সময় দ্রুত অতিবাহিত হওয়ায় সেচের উপর চাপ পড়েছে একসাথে, এ কারনেই এমন পরিস্থিতি ঘটছে।
নিয়ামতপুর কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবার চলতি বোরোর মৌওসুমে উপজেলায ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এসকল জমিতে সেচ ব্যবস্থার জন্য রয়েছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর-অগভীর নলক’প। এছাড়াও রয়েছে ডিজেল চালিত সেচপাম্প।
জানা যায়, উপজেলায় গভীর ও অগভীর মিলে রয়েছে প্রায় ১৫০০ টি নলক’প। এসকল নলকুপে পানির ভ’গর্ভস্থ লেয়ারের ভিত্তিতে ঘন্টা প্রতি সেচের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলা সেচ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলার চন্দননগর, ভাবিচা, শ্রীমন্তপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নে চলতি বোরো মৌসুমে ১৪০০ টাকা হারে (বিঘা প্রতি), নিয়ামতপুর সদর, হাজিনগর, রসুলপুর ও পাঁড়ইল ইউনিয়নে ১৬০০ টাকা হারে সেচের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কৃষকের অভিযোগ, সেচ কমিটির নির্ধারিত মূল্য হারের চেয়েও অধিক আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে কেউ মুখ খুললে তাকে দেওয়া হচ্ছে না চাহিদামত পানি।
মাদারীপুর গ্রামের কৃষক সরেন বলেন, আমি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ১৫শতক জমিতে বোরো লাগিয়েছি। ২৫০০ টাকা বিঘা হারে টাকা পরিশোধ করার পরও পানির অভাবে ধান মরে যাচ্ছে। পানি নিতে সেচযন্ত্রের মালিক নাসিরুলের কাছে বার বার গেলেও তিনি নানা অজুহাতে পানি দিচ্ছেন না। এতে জমিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। ধানগাছগুলো লাল হয়ে পড়েছে। এখন পানি না মিললে ধানগাছ মরে যাবে। তখন পানি মিললেও আর কিছু করার থাকবে না।
পানি না দেয়ার বিষয় জানতে চাইলে কৃষকের অভিযোগ অস্বীকার করে সেচযন্ত্রের মালিক নাসিরুল বলেন, এবার মাঠ থেকে প্রায় একই সঙ্গে সরিষা উঠায়, সেসকল জমি তৈরী করতে সবাই একসঙ্গে চাপ দিচ্ছেন পানির জন্য। অনেকে জোর করে পানির লাইন নিজের জমিতে ঘুরিয়ে নিচ্ছে। এতে করে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়িত। এমন পরিস্থিতিতে সিরিয়াল রক্ষা করতে চরম হিমসিম খেতে হচ্ছে।
সহকারী প্রকৌশলী (বিএমডিএ) হারুন অর রশিদ বলেন, বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে এটি তিনি জানেননা। তবে এ বিষয়ে কৃষকের লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে প্রতিটি এলাকায় নির্ধারিত সেচের মূল্য (ঘন্টা প্রতি/ বিঘা প্রতি) মাইকিং করে কৃষকদের অবগত করা হবে।