সুস্থ জীবন নিয়ে মানুষের দীর্ঘায়ু লাভের ক্ষেত্রে ধূলিকণা-মুক্ত নির্মল ও বিশুদ্ধ বায়ু বা বাতাসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আবার অন্যভাবে বলা যায়, দূষিত বাতাস বা দূষিত পরিবেশ আয়ু কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহর রাজধানী ঢাকা। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বায়ুর মানের তালিকায় রয়েছে এই শহর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ু দূষণ বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ মিলিয়ন লোককে হত্যা করে। মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়। বায়ুদূষণ-জনিত রোগে বাংলাদেশে কতসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তার কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইন্সটিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। দেশের বাতাসে সবচেয়ে বিপজ্জনক পিএম ২.৫-এর পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ করা পরিমাণের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা আবারও প্রথম স্থানে উঠে এসেছে। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই ঘটছে পরিবেশ-দূষণ। বিশ্বের প্রভাবশালী স্বাস্থ্য সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণের কারণে ঘটা মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে। আর রাজধানী ঢাকা তো অনেক বছর ধরেই বসবাসের অযোগ্য ও নিকৃষ্টতম শহরগুলোর একটি, যার অন্যতম কারণ পরিবেশ দূষণ। প্রতিদিন বাড়ছে বায়ু দূষণ, বিভিন্ন কারণেই দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। যানবাহন ও শিল্প কারখানার ধোঁয়া; বস্তিতে প্রায় চল্লিশ লাখ চুলায় আবর্জনা, কেরোসিন ও কাঠ-কয়লা দিয়ে রান্নার ধোঁয়া; ইটভাটা; ঢাকার বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার ট্রাক ও যানবাহনের ধুলা ও ধোঁয়া এবং রাস্তা ও চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজের ধুলা বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ। আমাদের এখানে গৃহের ভেতর দূষণ (ইনডোর এয়ার পলুশন) বেশি হয়। এছাড়াও স্বাস্থ্যসম্মত রান্নাঘর ব্যবহার না করায় রান্নাঘর থেকেও প্রচুর বায়ুদূষণ হয়। এসব বিষয়ে যদি আমরা সচেতন হই তাহলে দূষণ কম হবে। কাজগুলো অল্প অল্প করে শুরু করতে হবে। এজন্য সরকারি পর্যায় থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। তাই এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং আশা করি সরকার এ বিষয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে দেশ ও ঢাকা শহরকে রক্ষা করবে।