বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের জনগণের দল। আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। এর শেষ পযায়ে এসে বিএনপি সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবিতে আন্দোলন করছে, সেই দাবি ভিত্তিহীন, অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক। তাই সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া তাদের দাবি মানা সম্ভব নয়। কিন্তু সংবিধান পরিবর্তন করারও সুযোগ নেই, কারণও নেই। আর এই কারণেই বিএনপির আন্দোলন বাংলাদেশের মাটিতে কখনোই সফল হবে না।’ বিএনপি-জামাতের নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লিটন এসব কথা বলেন।
এছাড়াও ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে একই সময়ে একই বাজারের পূর্ব পার্শের এলাকায় তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, খালেদা জিয়াসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে আয়োজিত পদযাত্রাটি কোন ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই সম্পন্ন করেছে বানেশ্বর ইউনিয়ন বিএনপি।
এদিকে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি বিএনপি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশের নামে পিকনিক করেছে। পিকনিকের এই আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়। বিএনপি যতদিন মাঠে থেকে আন্দোলন করবে, আমরাও নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে থাকবো। বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও করবে, আমরা বসে থাকবো- এমনটি ভাবার কারণ নেই। আর এ অবস্থার সৃষ্টি হলে আমরাও রাজপথে থেকে বিএনপিকে প্রতিরোধ করবো।
শান্তি সমাবেশে রাসিক মেয়র লিটন আরো বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো পালাবে না। পালিয়ে গেছে তো তারেক জিয়া। আমরা ছিলাম, আছি ও আগামীতেও থাকবো। দেশে থেকেই আমরা জনগণের কল্যাণেরাজনীতি করে যাব। কারণ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই মানুষের কল্যাণ হয়, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আর বিএনপি কখনোই মানুষের কল্যাণ চায় না। অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের নামে সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি। তাদের আন্দোলন ও অপচেষ্টা কখনো সফল হবে না। আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে বিএনপিকে দাতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে আজ উন্নয়ন দৃশ্যমান। আমরা নিজস্ব অর্থে বিশ্বের বিস্ময় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। ঢাকায় মেট্রোরেল চালু হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঈশ্বরদীর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন দেশের অগ্রযাত্রাকে রুখতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে বিএনপি-জামায়াত। তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র কোনোদিন সফল হবে না। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রাকে কেউ রুখতে পারবে না।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লিটন বলেন, দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার নেই। ভারত, ইংল্যান্ড সহ বিশ্বের উন্নত দেশে ক্ষমতাসীন সরকার বহাল থেকে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেইভাবে নির্বাচন হবে। আর আগামী নির্বাচনেও জনগণ নৌকার পক্ষে রায় দেবে জানিয়ে লিটন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের মানুষ ভালো আছে, সুখে আছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জনগণ নৌকার পক্ষে রায় দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ধনী ও স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে।
পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রহিম কনকের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান ছাড়াও দলটির জেলা, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলার ৭২টি ইউনিয়নে ব্যাপক পরিসরে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শান্তি সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ও জনসাধারণ অংশ নেন। রাজশাহী জেলার শান্তি সমাবেশের দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সদস্য বেগম আখতার জাহান।
অন্যদিকে, ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে একই সময়ে পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারের পূর্ব এলাকায় তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, খালেদা জিয়াসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে আয়োজিত পদযাত্রাটি বানেশ্বর ধান হাঁটা থেকে শুরু হয়ে ঢাকাণ্ডরাজশাহী মহাসড়কের বানেশ্বর ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে আবার শুরুর স্থানেই শেষ হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ, বিএনপি নেতা আলম মেম্বার, বানেশ্বর ইউনিয়নের আহ্্বায়ক হযরত সরকার ও বানেশ্বর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।