রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয় যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতা দিবস। এই দিনটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হলো, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং যৌন সংক্রমণের বিস্তার কমানো। কেননা যৌন সংক্রমণ জনস্বাস্থ্যের উদ্বেগগুলির মধ্যে একটি। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও অসচেতনতার কারণে (১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী কিশোর কিশোরী) মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ নারী ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ফলে অধিকাংশ কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও উপলব্ধি না থাকায় দেশের বিভিন্ন সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন হলেও এখনো কিশোরী মাতৃত্ব হারের উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এতে করে বোঝা যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ খুবই কম। কারণ স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক যে নীতি, কর্মসূচি ও সেবা সমূহ রয়েছে। সেখানে কিশোর-কিশোরী ও যুবকদের জীবন বাস্তবতা, প্রয়োজন ও চাহিদাগুলো বিবেচনায় নিয়ে তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক প্রতিফলন হয় না। তাই যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে লজ্জা নয় বরং সচেতন হওয়া জরুরি এবং তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ব্যাপক ভিত্তিক প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা, লিঙ্গ বৈষম্যতা দূরীকরণে সামাজিক সহনশীলতা ও যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া যৌন ও প্রজনন-স্বাস্থ্য শিক্ষা পাওয়া সবার অধিকার। তরুণ-তরুণীদের জীবনকে সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে গড়ে তুলার জন্যে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, তাদের ওপর অনেক গুরুদায়িত্ব। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তরুণদের কাজে লাগাতে হবে। যথেষ্ট ব্যবহারিক জ্ঞান না থাকায় অনেক বাধার সম্মুখীন হতে পারে। জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত মানসম্পন্ন ও জীবনমুখী শিক্ষা দেওয়া খুব জরুরি। একজন মানুষ নিজে সুস্থ না থাকলে তিনি তাঁর পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য কীভাবে কাজ করবেন এবং বাংলাদেশের শিক্ষার মধ্যে কিছু ধরন পরিবর্তনও আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে যৌন ও প্রজনন অধিকার সম্পর্কে সহযোগিতা না পেলে তাঁরা কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবেন না। ২০২১ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষা বিভাগ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুলকে বয়ঃসন্ধি কালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে। তবে কতটুকু কার্যকর হয়েছে তা বোঝার জন্য আরও সময় প্রয়োজন। এখনো অনেক স্কুলেই শিক্ষকরা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে পড়াতে সংকোচ বোধ করেন। খুবই সাধারণ একটি ধারণা ছাড়া এর বেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বয়ঃসন্ধিকাল তবে- প্রজনন অঙ্গের রোগ, গর্ভধারণের সঠিক উপায়, নবজাতকের জন্য করণীয়, শিশুবিয়ের ঝুঁকি ইত্যাদি অনেক কিছুই থেকে যাচ্ছে তাদেও জানার বাইরে। নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানার পেছনে বাধা থাকা উচিত নয়। স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে চলার অর্থ নিজেদের জন্যই বিপদ ডেকে আনা। তাই অবশ্যই যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলেই হয়তো এই সমস্যা গুলোর সমাধান হবে বলে আশা রাখছি।