দলের মধ্যকার টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই ভাঙ্গা-গড়ার খেলার মধ্যে পরেছে বরিশাল দক্ষিণ ও উত্তর জেলা বিএনপির আওতাভূক্ত সদ্য ঘোষিত উপজেলা কমিটিগুলো। যা দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে।
খোঁদ বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সদ্যঘোষিত কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। ইতোমধ্যে কমিটির অনুমোদন দেয়া জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ঝাড়- মিছিল, কুশপুতুল দাহ, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখানসহ ওইসব নেতৃবৃন্দকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করা হয়েছে। এমনকি ঘোষিত কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘটনাও ঘটেছে। নবগঠিত কমিটির একাধিক নেতৃবৃন্দও তৃণমূল বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সাথে এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন।
দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে মাঠপর্যায়ের হামলা ও মামলার স্বীকার হওয়া বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীরা বলেন, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতৃত্বের পালা বদলের খেসারত গুণতে হচ্ছে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের। সূত্রমতে, দলের গঠণতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপি এবং ৮ নভেম্বর বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠণ করা হয়। এর আগে ১৯ জুলাই বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির কর্মীসভায় পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সেমতে আলহাজ¦ নুরুল আমিনের নাম আহ্বায়ক হিসেবে প্রস্তাব করা হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন করা হয়। একইভাবে বাকেরগঞ্জ উপজেলায়ও কমিটি গঠণ করা হয়। ওই কমিটি ঘোষণার পর ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের পদে পরিবর্তন আসে। যাতে আবুল হোসেন খানকে আহ্বায়ক এবং অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীনকে সদস্য সচিব করা হয়। আবুল হোসেন খান এবং আবুল কালাম শাহীন দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আসার পর হঠাৎ করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি দলের গঠণতন্ত্র, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে তাদের নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তি করে তড়িঘড়ি করে দলের ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের বাদ দিয়ে তাদের অনুসারীদের নিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
অপরদিকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠণের প্রক্রিয়া শুরু করার সাথে সাথেই উপস্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে আহবায়কের অনিয়মের বিষয়টি প্রকাশ পায়। তাৎক্ষনিক নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
একইভাবে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব তাদের অনুসারী নিস্কীয় নেতাকর্মীদের সমন্ময়ে দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে মুলাদী, আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলা এবং পৌর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেন। আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচএম আফজাল হোসেন, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির ঘোষিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউজ্জামান মিন্টু, ঘোষিত কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক তাইফুর রহমান কচি, আনোয়ার সাদাত তোতা, সদস্য ও সাবেক সহসভাপতি মঞ্জুর হোসেন মিলন, সদস্য আকতার হোসেন বাবুল, বিএনপি নেতা মাহবুবুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক চোকদার, জেলা উত্তর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদ্য ঘোষিত কমিটির সদস্য রাশেদুল ইসলাম টিটন, গৌরনদী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রুবেল গোমস্তা, ছাত্রদল নেতা শহিদুল ইসলাম, রাসেল হাওলাদার, যুবদল নেতা বাচ্চু সিকদারসহ অসংখ্য নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, সদ্য ঘোষিত গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ সরোয়ার আলম বিপ্লব একসময় জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী রুহুল আমিনের এপিএস ও জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন। দীর্ঘদিন থেকে নিজ এলাকার বাহিরে থেকে রাজনীতিতে সে পুরোপুরি নিস্ক্রীয় রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পদে নিস্কীয় কর্মীদের রেখে পকেট কমিটি গঠণ করে মাঠে থাকা নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির গুরুত্বপূর্ণসহ অধিকাংশ পদে সংস্কারপন্থি নেতা জহির উদ্দিন স্বপনের নিস্কীয় সমর্থকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাই এ পকেট কমিটি বিলুপ্ত করে অনতিবিলম্বে মাঠে থাকা নেতাকর্মীদের নিয়ে গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠনের জন্য তারা দলের হাইকমান্ডের কাছে জোর দাবি করেন।
ইতোমধ্যে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি ও তার সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘোষিত পকেট কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বরিশাল নগরীতে ঝাড়- মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও জেলা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব মিজানুর রহমান খান মুকুলের কুশপুতুল দাহ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুলাদী প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সদস্য আবিদুর রহমান শরীফ বলেন, মুলাদী উপজেলার ৬১ ও পৌর বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিতে ত্যাগী, নির্যাতিত, সাংগঠনিক ও যোগ্য নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অযোগ্য, দলছুট, বিভিন্ন দলের ব্যক্তি ও দেশে না থাকা নিস্কীয়দের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে শহীদুল-মুকুলকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে অভিযোগ করা হয়, অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে ঘোষিত বির্তকিত কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠন করা না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সংবাদ সম্মেলন শেষে অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে ঘোষিত পকেট কমিটি অনুমোদন করায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে জেলা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে বিষোদাগার করে ঝাড়ু মিছিল বের করা হয়।