কালীগঞ্জে বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বেড়েছে ফুলের দাম। অন্য সময়ের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ফুল। স্থানীয় বাজার গুলোতে দেখা গেছে, প্রতিটি গোলাপ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩২ টাকায়। আর খুচরা বাজারে সেটি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। অথচ এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ৮ থেকে ১২ টাকা। এ ছাড়া জারবেরা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। গত সপ্তাহে যার দাম ছিল ৩ থেকে ৪ টাকা। রজনীগন্ধার স্টিক বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ২ থেকে ৩ টাকায়। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে ফুটে আছে লাল, হলুদ ও কমলা রঙের জারবেরা। লাল, হলুদ আর সাদা রঙের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিয়াস ও গাদা ফুল। ফুটে থাকা ফুলের রঙে স্বপ্ন রাঙ্গাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা। প্রতি বছর ফেবব্রুয়ারি-মার্চ মাসে জেলার চাষি ও ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় ২৬৮ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে গোলাপ ২০ হেক্টর, গাদা ১৪৩ হেক্টর, রজনীগন্ধা ৬২ হেক্টর, জারবেরা ২১ হেক্টর, চন্দ্রমল্লিকা ১০ হেক্টর ও ৮ হেক্টর জমিতে গ্লাডিয়াস ফুলের চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফুলের চাষ হয় সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ সর্ব প্রথম ১৯৯১ সালে জেলার ফুল চাষ শুরু করেন। তিনি ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার ঘটে। বর্তমানে জেলার হাজার হাজার কৃষক ফুলচাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ফুলচাষী টিপু সুলতান জানান, ২০১৭ সালে ৫৫ লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করেছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। এরমধ্যে গোলাপ রয়েছে ৫ বিঘা। তিনি বলেন, “বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে গোলাপ পাইকারি ২০ থেকে ৩০ দরে বিক্রি করেছি। প্রতিদিন এক হাজার থেকে দেড় হাজার গোলাপ ঢাকার বাজারে পাঠাচ্ছি।” কালীগঞ্জের মেইন বাসস্ট্যান্ড, বালিয়াডাঙ্গা বাজার এবং ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্নার ফুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিনচালিত পরিবহনে করে নিয়ে এসেছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড ভরে যাচ্ছে লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে। কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, বর্তমানে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সারা বছরই ফুল বেচা কেনা হয়। তবে প্রতি বছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস, ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণের দিন ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও ভালো পাওয়া যায়। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলী জানান, ঝিনাইদহ মাটি ও আবহাওয়া ফুলচাষের জন্য উপযোগী। এ বছর জেলায় ২৬৮ হেক্টর জমিতে গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল চাষ হয়েছে। ফুলচাষ এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে। ফুল পরিবহন ও সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু হওয়ায় খুব সহজে ফুল ও কৃষিপণ্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠানো যাচ্ছে। অন্যদিকে ফেরিঘাটে ফুলবাহী গাড়ি আগে পারাপারের বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেথে কথা হয়েছে। এ ছাড়া ফুল সংরক্ষণের জন্য বালিয়াডাঙ্গা বাজারে ফুল অ্যাসেম্বলি সেডের সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক রুম করা হয়েছে। যেখানে ফুল ও ফলের বীজ সংরক্ষণ করা যাবে।”