এশিয়ার বৃহত্তর হাওর হাকালুকিতে শীতকালে চীন, সাইবেরিয়াসহ বরফাচ্ছন্ন বিভিন্ন দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির দল প্রাণ বাচাতে ছুটে আসে হাকালুকি হাওরে।প্রতি বছর অতিথি পাখির কলরবে মুখর হয়ে উঠে বিলগুলো। কালের পরিক্রমায় অধিকাংশ বিল ভরাট হয়ে গেচে। সেই সাথে অবৈধ শিকারীদের দৌরাত্ব্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পাখির সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখে দুই দিন ব্যাপী হাকালুকি হাওরে পরিচালিত হয় পাখিশুমারি। বাংলাদেশ বন বিভাগ, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) পাখি শুমারি করে। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি। এ হাওরে রয়েছে ছোট-বড় ২৩৮টি বিল। হাকালুকিতে এখন যে কয়েকটি বিল রয়েছে বর্ষাকালে ভারত থেকে নেমে আসা পলিমাটিযুক্ত পানি বিলের মধ্যে প্রবেশ করছে ফলে বিলগুলো ভরাট হয়ে নাব্যতা হারাচ্ছে। শীত থেকে বাঁচতে এসে প্রাণ হারাচ্ছে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি। যার কারণে হাকালকি হাওরের জীববৈচিত্র এখন হুমকির মুখে। বাংলাদেশে ৭১৮ প্রজাতির পাখির মধ্যে ৩৮৮ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী। শীতকালে পরিযায়ী হয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসে বাংলাদেশে। তারা বেছে নেয় হাকালুকি হাওরের জলাশয়। প্রায় ১৮১ বর্গ কিলোমিটার এ হাওরে রয়েছে ছোট বড় ২৭৬ টি বিল। বিগত বছরের মতো এবারও হয় পাখি শুমারি। তাদের জরিপে হাকালুকিতে এবছর এসেছে ২৫ হাজার পাখি। যা বিগত বছর গুলো থেকে অনেক কম। যা ২০২০ সালে ছিল ৪০ হাজার ১২৬ টি পাখি। মাত্র কয়েক বছর আগে দেশে ৫-৬ লাখ পরিযায়ী পাখি আসত। এসব পাখির কলোকাকলিতে মৌলভীবাজার ও সিলেটের হাওর গুলোকে মুখরিত রাখতো। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) এর পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ২০ বছরে সমগ্র বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ কমেছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। এবং হাকালুকিতে কমেছে ৪৫ শতাংশ। ২০০০ সালের আগে হাওরে গড়ে বিচরণ করতো ৭৫-৮০ হাজার পাখি। ৮০ শতাংশ পাখি বিচরণ করত হাকালুকি হাওরে। পরিযায়ী পাখির সংখ্যা এত দ্রুত কমে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ উদঘাটন করেছেন পাখি বিষেজ্ঞরা।
পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, নদী দূষণ, বেড়জাল, বিষটোপ ও পটাশ দিয়ে পাখি শিকার, একসাথে বেশ কয়েকটি বিলে মাছ আহরণ, ইজারাদার দ্বারা বিল শুকিয়ে মাছ নিধন, বিলে দিবারাত্রি পাহারা ও জলজ বৃক্ষ নিধন সহ নানান সমস্যার কারণে অতিথি পাখির সংখ্যা দিনদিন কমে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র।
পাখি বিশেষজ্ঞ বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর হাওরে বিলগুলো ইজারা দেয়া হয়। এ বছরও হয়েছে। এতে বেশ লোকসমাগম ঘটে। দিনরাত পাহারা দেয়া হয়। এসব কারণে পরিযায়ী পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে না। ইজারদার দ্বারা বিল শুকিয়ে মাছ আহরণের কারণে নষ্ট হচ্ছে হাওরের জীববৈচিত্র। ফলে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমছে।