খুলনার পাইকগাছায় শিবসা নদী দখল ঠেকাল উপজেলা প্রশাসন। এবার উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছেন। মঙ্গলবার পৌরসভার অপরপ্রান্তে জেগে উঠা চরে স্কেভেটর মেশিনে মাটিকেটে বেড়িবাঁধ দেয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরাফাত হোসেন ঘটনাস্থলে পৌছে বাঁধ বন্ধ করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিয়াবুউদ্দীন ফিরোজ বুলু, প্যানেল মেয়র মাহবুবুর রহমান রঞ্জু ও সোলাদানা ইউপি চেয়ারম্যান আ. মান্নান গাজী প্রমুখ। শিবসা নদীটির দৈর্ঘ্য ৮৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫১০ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক শিবসা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং-৮৮। নদীটি উপজেলার লস্কর ইউনিয়নে প্রবাহমান কপোতাক্ষ নদ হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা একই জেলার দাকোপ উপজেলার খুলনা রেঞ্জ এলাকায় প্রবাহমান পশুর নদীতে নিপতিত হয়েছে। গত কয়েক বছর আগেও নদীতে সারাবছর নৌযান চলাচল করতো। জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত হতো। এই নদীর কিছু অংশ বাংলাদেশ-ভারত প্রটোকল রুটের অন্তর্গত। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দ্বিতীয় শ্রেণীর নৌপথ হিসাবে স্বীকৃত। শিবসা নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার ভরাট হয়ে গেছে। অনেকে নদীর জায়গায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন। যে কারণে দিন দিন নদীর জায়গা কমছে। নদীর বক্ষে পলি পড়ে সমতল ভূমি হয়েছে। এ ছাড়া নদীর জমি দখল করে চিংড়ি ঘের করেছে অনেক প্রভাবশালীরা। বেশ কিছুদিন ধরে দিন-রাত্রে স্কেভেটর মেশিনে মাটি কেটে একের পর এক সরকারি জমি দখল করছে। মঙ্গলবার নদীর জায়গা দখল চেষ্টাকালে প্রশাসনের বাঁধার মুখে বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়রা বলেন, এক সময়ে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ভিলেজ পাইকগাছার উত্তর পাড়ার বাসিন্দা বাহার আলী, লিটন, আমিনউদ্দীন, প্রভাষ, গোপাল হাজরা, শহীদ সহ অনেকেই চরভরাটি জমিতে বাঁধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছেন এবং এদের পিছনে অনেকেই রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে ইতোপূর্বে পৌরসভায় শহর রক্ষা বাঁধের নামে চরভরাটি বাঁধ দিলে নদীর দু'পারে সরকারি জমি দখল শুরু হয়। ভিলেজ পাইকগাছার উত্তর পাড়ার বাসিন্দা মোহর আলী, প্রভাষ, গোপাল হাজরা উপস্থিতে অনেকে বলেন, ইতোপূর্বে আমাদের পৈত্রিক রেকডিয় জমাজমি নদী ভাঙনের স্বীকার হয়ে বহু পরিবার ভিটেমাটি ও ঘরবাড়ী হারাতে হয়েছে। বহুদিন পর সেই ভাঙনের জমি চরভরাটি হলে অন্যান্যের মতো আমরাও বাঁধ দিয়ে দখলে নিচ্ছি। তবে তারা স্বীকার করেন পৌরসভা সহ সকলের দেয়া বাঁধ উচ্ছেদ হলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরাফাত হোসেন জানান, নদীর স্বাভাবিক জোয়ারের পানি যে পর্যন্ত উঠবে সেই পর্যন্ত নদী বলে বিবেচিত হবে। এখানে চরভরাটি জমি নিজেদের দাবী করে দখল করার কোন সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, নদীর চরভরাটি সরকারি জমি থেকে পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করা হবে।