দীর্ঘ ৮ বছর পর আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা আ'লীগের সম্মেলন। গত ২৫ জানুয়ারি জেলা আ'লীগের কার্যকরী কমিটির মুলতবী সভায় দিঘলিয়াসহ পাইকগাছা বাদে সংগঠনের আটটি উপজেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। দিঘলিয়া উপজেলার সন্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে নেতৃত্ব প্রত্যাশী এবং তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যসহ নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। গোটা দিঘলিয়া উপজেলার আ'লীগ পাড়ায় একটায় জিজ্ঞাসা কে হচ্ছেন আগামীদিনের কা-ারী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ইতোমধ্যে নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। আশীর্বাদ নিতে ছুটছেন কেন্দ্রীয় এবং জেলার দায়িত্বশীল নেতাদের দ্বারে দ্বারে। নেতা নির্বাচনী বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী মহলে।
দিঘলিয়া উপজেলায় আ.লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাল ধরতে নেতৃত্ব প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের সংখ্যা ৯ জন। এদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে অধিকাংশই তরুণ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ওই সম্মেলনে খান নজরুল ইসলামকে সভাপতি এবং মোল্লা আকরাম হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনকে সামনে রেখে এ পর্যন্ত সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নেতৃত্ব প্রত্যাশী ৯ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি খান নজরুল ইসলাম, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও দিঘলিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হায়দার আলী মোড়ল ও সেনহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোল্যা আশরাফ হোসেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে নেতৃত্ব প্রত্যাশী ৬ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোল্লা আকরাম হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোঃ সেলিম মল্লিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আলী রেজা বাচা, সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা ফিরোজ হোসেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সেনহাটি ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জিয়াউর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ আমিনুর রহমান।
এছাড়াও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আরো ২/১ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ নেতা দিঘলিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল এ প্রতিবেদককে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে মজবুত শক্তিশালী হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। আর সংগঠনকে বর্তমানের এই বেহাল অবস্থা থেকে এগিয়ে নিতে হলে শক্ত, তরুন ও নতুন নেতৃত্ব আসতে হবে। দীর্ঘদিন দলের কাউন্সিল না হওয়ায় একই নেতৃত্বের পরিবর্তন না আসায় দিঘলিয়ায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল হওয়া সত্ত্বেও দলের ইমেজ ও টিম স্প্রীট বিনষ্ট হয়েছে। তাই দিঘলিয়ায় আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করাতে হলে নেতৃত্বের পরিবর্তন প্রয়োজন।
দিঘলিয়ার সেনহাটি ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান স্থানীয় তরুন ও বলিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী গাজী জিয়াউর রহমান (জিয়া গাজী) এ প্রতিবেদককে বলেন, দিঘলিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চাই নতুন নেতৃত্ব। তৃণমূল সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আশা করি নীতি নির্ধারণী মহল এদিকেদৃষ্টি রেখেই নেতা নির্বাচন করবেন।
অপর একজন সভাপতি পদ প্রার্থী সেনহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সেনহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোল্যা আশরাফ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, আগামী দিনে দলকে এগিয়ে নিতে হলে দিঘলিয়ায় অবশ্যই নেতৃত্বের পরিবর্তন আনতে হবে। গত ৮ বছর দলের কাউন্সিল না হওয়ায় দলের মাঝে নানা সমস্যা বিরাজমান। দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে হলে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুশৃঙ্খল করতে নেতৃত্বের পরিবর্তন আনতে হবে।
দিঘলিয়া উপজেলার অপর একজন তরুন আওমীলীগ নেতা ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী মোঃ আমিনুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, আগামীদিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুন, শিক্ষিত ও স্মাট নেতৃত্বের প্রয়োজন। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। যে নেতৃত্ব হবে গণমুখী ও কর্মী বান্ধব।
দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক সবেক ছাত্র নেতা মোঃ সেলিম মল্লিক এ প্রতিবেদককে জানান, বিগত দিনে দীর্ঘদিন কাউন্সিল না হওয়ায় নেতৃত্বের যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনি সংগঠনের ও ক্ষতি হয়েছে। তাই যে প্রক্রিয়ায় হোক দলকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে হলে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মীবান্ধব যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে।
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধ আলহাজ¦ শেখ হারুনুর রশীদ ফুলতলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল। এ দলের নীতি আদর্শ রয়েছে। দুর্ণীতিবাজ, মাদক সন্ত্রাসী ও টেন্ডারবাজদের দলে স্থান নেই। সন্মেলনের মাধ্যমে দল গতিশীল হয়। তাই তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করতে যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে।
এদিকে সম্মেলনে নেতৃত্ব বাছাই নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। আর সেটা হলো কোন প্রক্রিয়ায় উপজেলার নেতৃত্ব বাছাই হবে এবং নেতৃত্ব নির্বাচনে মাঠের কর্মীদের চাওয়া পাওয়া মূল্যায়িত হবে নাকি উপেক্ষিত হবে সেটা নিয়ে। দলের উপজেলা সম্মেলনে নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. সুজিত অধিকারীর কাছে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মাদক, ভূমি দখলের অভিযোগ, অস্ত্রবাজ এ জাতীয় কাউকে নেতৃত্বে আনা হবে না। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয় কমিটিও চাই স্বচ্ছ ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনা হোক। স্বচ্ছ এবং যারা দলের ইয়াং এনার্জেটিক তাদেরকে নেতৃত্বে আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কর্মীবান্ধব নেতা চাই। যে নেতা কর্মীদের পছন্দ করেন, ভালোবাসেন, কাছে টেনে নেবেন। কর্মীরা যাকে দেখে এগিয়ে আসেন, ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, আমরা চাইবো তারাই নেতৃত্বে আসুক। নেতৃত্ব বাছাই প্রক্রিয়া সমঝোতার মাধ্যমে হতে পারে, কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমেও হতে পারে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেটা আছে, সেভাবেই আমরা নেতৃত্ব বাছাই করবো।