চিরিরবন্দরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় কর্তৃক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গৃহহীন দু:স্থ ও অসহায় পরিবারের মধ্যে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে ১০ টি পরিবারকে বাড়ি বরাদ্দ দিতে টাকা নেয়া ও নিজ আত্নীয়ের বাড়ি থাকার পরেও বাড়ি বরাদ্দ নিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আদিবাসি ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক ডুই টুডুর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ,সরকার অসহায় গৃহহীন ও দু:স্থ পরিবারকে ঘর নির্মান করে দিবে বলে আমাদের কাছে উপজেলা আদিবাসি ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক ডুই টুডু জাতীয় ভোটার আইডি কার্ড ও জমির কাগজ পত্রের ফটোকপি জমা নেয় এবং অফিসে দেয়ার কথা বলে জনপ্রতি ১ হাজার টাকা নেয়। কিছুদিন পরে আমাদের জানানো হয় যে আমাদের নাম আসছে সরকারি ঘরের বরাদ্দের তালিকায়। কয়েকদিন পরে আমাদের ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক বলে, এখন ঘর নিতে হলে ৩০ হাজার টাকা করে দিতে হবে। উপজেলার বড় অফিসারদের টাকা দিতে হবে, টাকা না দিলে ঘরের নাম কাটা যাইবে। তখন ডুই টুডুকে ৫ হাজার থেকে শুরু করে কেউ কেউ ২০ থেকে ২৩ হাজার থেকে পর্যন্ত তার হতে দেয়া হয়েছে। টাকা দেয়ার একমাস পার হয়ে গেলেও ঘর নির্মানের কাজ এখনো শুরু হয়নি।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক আদিবাসি সংগঠনের এক সদস্য বলেন, যে ঘর পাওয়ার যোগ্য নয় ও নিজের আত্মীয়কে যাদের দালানের ঘরবাড়ি তাদের নাম দিয়েছে টাকা নিয়ে। যারা টাকা দিতে পারেনি তাদের ঘরের তালিকায় নাম দেয়নি আমাদের সংগঠনের সাধারন সম্পাদক ডুই টুডু।
ঘর পাওয়া প্রকল্পের তালিকায় নাম থাকা উপজেলার পুনট্রি ইউনিয়নের মিনতি মার্ডি বলেন, ঘরের তালিকা থেকে নাম কাটা যাওয়ার ভয়ে বাধ্য হয়ে ২৩ হাজার টাকা জমা দিয়েছি।
অমরপুর ই্উনিয়নের রসেন সরেন বলেন, আমাদের আদিবাসি সংঘঠনের সাধারন সম্পাদক ডুই টুডু বলেছেন সরকারি ঘর নিতে হলে সরকারি একটা ফি আছে ৩০ হাজার টাকা। সেটা দিতে হবে নাহলে ঘর বরাদ্দ দিবে না। বাধ্য হয়েই তাকে ১৯ হাজার ৬ শত টাকা দিয়েছি।
একই ইউনয়িনের পকোই সরেন বলেন, দুই দিনে ৯০০ টাকা দিছু, আরো ২০ হাজার টাকা চাছে, টাকা দিবার না পারো ,তাহে বলে ঘরের কাজ শুরু না করে। মুই এতগুলো টাকা কুনঠে পাইম।
উপজেলার ফতেজনংপুর ইউনিয়নের শান্তি বালা ও কুমহর রবি দাস বলেন, ঘর পাওয়ার তালিকায় আমাদের নাম থাকলেও এখনো ঘরের কাজ শুরু করেনি। ঘর নেয়ার জন্য আমার দুই পরিবার আপতত ৫ হাজার করে টাকা দিছি।
উপজেলা আদিবাসি সংগঠনের সাধারন সম্পাদক ডুই টুডু সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে তা সত্য নয়। আমাদের আদিবাসি সংগঠনের কিছু লোক এসব বলতেছে। এর আগেও আমার নামে অসংখ্য অভিযোগ উঠছে তদন্ত করে কিছু পায়নি। নিজ আত্মীয়কে দালানের ঘর বাড়ি থাকার পরেও ঘরের তালিকায় তাদের নাম দিয়েছেন কেন প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন,এটা আমার ভুল হলে তাদের নাম কেটে দেয়া হবে। আর আমি এক হাজার দুই হাজার টাকা নিছি, এটা ইউএনও স্যারও জানে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মনোয়ারুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আদিবাসিদের ঘর বরাদ্দ দেয়া, তদারকি সংক্রান্ত কোন কাজ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নয়। তালিকা নির্বাচনসহ যাবতীয় কাজ সংশ্লিষ্ট অফিস করছেন।
এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খালিদ হাসান বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমারও কাছে আসছে। ইতিমধ্যে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আদিবাসীদের গত ২৫ বছর ধরে নিবন্ধিত কোন সমিতি না থাকায় ইচ্ছেমত অনেকেই অবৈধ সুবিধা গ্রহন করার চেষ্টা করেছে। খুব দ্রুত তাদের প্রকাশ্যে সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হবে। তদন্ত কমিটির আলোকে করো বিরুদ্ধে দোষ প্রমানিত হলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।