বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আমড়াঝুড়ি গ্রামে গাঁজাসহ আটক সাময়িক বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্য কাওছার সিকদারের গাঁজা বিক্রির অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় টক অফ দা টাউনে পরিনত হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বেশ কয়েকটি পেইজে পুলিশ সদস্য কাওছার সিকদার ও কয়েকজন মাদকব্যবসায়ীর কথোপকথনের অডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি এলাকায় টক অফ দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।
অডিওতে কাওছার ও মাদকব্যবসায়ীদের মধ্যে গাঁজা কেনাবেঁচার স্থান ও সময় নিয়ে কথা হয়। একজন মাদকব্যবসায়ীকে বলতে শোনা যায়," দোস্ত মাল নিয়া কখন আসবি। এক হাতে টাকা এক হাতে মাল। কোনো ঝামেলা নাই। এসময় কাওছার বলেন, " দোস্ত মোর কিন্ত ওইহানের রহিম সিকদার টিকদার এগো লগে কাউর, নির্বাচনে তোমাগো ওইহানে গেলহাম। হেইকালে রহিম সিকদারের লগে কাউর অইছে। মোরে বেশি সময় খারা হইররা রাকপিনা, ওয়ান টুতে ছাইররা দিবি।" এরকম আরো এক ব্যক্তির সাথে কথা হয় গাঁজা বিক্রির বিষয়ে। ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, " মোর গাড়িরা বরইতলা ফেরিঘাট গ্যাছে। আইলেই মুই আধঘন্টার মইদ্দে মাল নেতে আইতেছি। "
জানা গেছে, ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার বেলা ১২টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আমড়াঝুড়ি এলাকা থেকে দুই কেজি গাঁজাসহ কাওসার সিকদারকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। কাওসারকে আটক করে বাড়ি থেকে নিয়ে আসার পর বেলা একটার দিকে বড় ভাই ফেরদৌস সিকদার বাবু কেরোশিন ঢেলে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন ধরানোর দৃশ্য নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভ করেন ফেরদৌস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি জানান, কাওসার প্রায়ই এম্বুলেন্স যোগে বাড়িতে সবসময়ই রাতের বেলায় আসতো। এমনকি আটক হওয়ার আগের দিন রাতে গাড়িতে করেই বাড়িতে এসেছিল। গ্রেফতার হওয়ার দিন কাওছার ডিবি পুলিকে জানান, তিনি ছুটি নিয়ে বরগুনায় তার বাড়িতে এসেছে।
জানাগেছে, বরিশাল জেলা পুলিশে কর্মরত এএসআই (সঃ)/১৭৬ মোঃ বাদল হোসেন স্বাক্ষরিত বরিশাল পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত একটি আবেদনপত্রে সাময়িক বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্য মোঃ কাওছাড় ১১ ফেব্রুয়ারি রোলকলে উপস্থিত ছিলেন না বলে উল্লেখ করে অবহিত করেন। অর্থাৎ বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন কাওসার।
এর আগে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট কীর্তনখোলা নদীতে ঝাঁপ দেয়। যা বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ওই মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করতে গেলে নিজেকে বাঁচাতে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়া ব্যক্তিটিই কাওছার, যাকে গত শনিবার গাঁজাসহ আটক করে পুলিশ। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় পরকীয়া প্রেমের দায়ে গত বছর ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ২২ তারিখে একটি মামলা করা হয়। মামলা নং-৫৬।
কাওছারকে নির্দোষ দাবি করে ঘরে আগুন দেয়া বড় ভাই ফেরদৌস বাবু একসময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে চাকরি করতেন। শিক্ষাগত সনদ জালিয়াতির দায়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) থেকে বরখাস্ত হন ফেরদৌস। এরপর থেকেই নিজ এলাকা বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আমড়াঝুড়িতে বসবাস করছেন বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি বেলা পৌনে ১২ টার দিকে দুই কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পুলিশ সুপার আব্দুস ছালাম সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় কাওছারকে আটকের পর বড় ভাই ফেরদৌস সিকদার ওরফে ফেরদৌস বাবুসহ সবাইকে অপপ্রচারর বন্ধে ঘরে আগুনের লাইভ ভিডিও সরাতে অনুরোধ জানিয়ে এসপি বলেন, সুনিদিষ্ট তথ্যে কাওছারকে গাঁজাসহ আটক করা হয়েছে। অপরাধ ঢাকতে ও এলাকার মানুষের সহানুভূতি পেতে ঘরে আগুনের নাটক করা হয়েছে।
পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের একদিন পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদনে ফের কাওছারের মা ভাই ও স্ত্রী দাবি করেন কাওছার নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে কাওছার সিকদার ও মাদকব্যবসায়ীদের কথোপকথনের অডিও ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মোঃ আবদুস ছালাম বলেন, কাওছার গাঁজাসহ হাতেনাতে ধরা পরার পর তার ভাইসহ গোটা পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যে অপবাদ ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম এসব মিথ্যে তথ্য না ছড়াতে। কিন্ত সেটা অব্যহত রেখেছে। আমরা সর্বোচ্চ সহনশীল আচরণ করছি। এরপর ও যদি তারা না বোঝে তবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।