রংপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারমাইকেল কলেজের জিএল হোস্টেলে হামলা ও ভাংচুর করেছে বহিরাগতরা। এ ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। শনিবার সাড়ে সাতটার দিকে জিএল হোস্টেলে হামলার এ ঘটনাটি।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে সাংবাদিকদের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমজাদ হোসেন। তিনি ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করাসহ অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাসের কথাও জানান।
জানা গেছে, শনিবার দুপুরে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসের বাংলা মঞ্চের সামনে মার্কেটিং বিভাগের ১ম বর্ষের আহসান নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বহিরাগত এক মাদকাসক্ত টোকাই বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এরই জের ধরে বহিরাগত টোকাইদের একটি গ্রুপ সংঘবদ্ধ হয়ে ওই শিক্ষার্থীর উপর হামলা করে। এ খবর জানতে পরে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এসে বহিরাগতদের ধাওয়া দিলে তাঁরা পালিয়ে যায়। এরই রেশ ধরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ৪০-৫০ জন বহিরাগত ছেলেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে ক্যাম্পাসে জিএল হোস্টেলে অতর্কিত ভাবে প্রবেশ করে হামলা চালায়। এ সময় তারা কয়েকটি রুমে ভাংচুর করে। এ ঘটনায় হল মনিটর আকিমুল ইসলাম ইমনসহ প্রায় ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আকিমুল ইসলামকে গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরপরই বহিরাগত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, ক্যাম্পাসে দ্রুত পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনসহ কয়েক দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় কলেজ অধ্যক্ষ তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে অধ্যক্ষকে জিএল হোস্টেলে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
আহত শিক্ষার্থীকে রংপুর মেডিকেলে দেখতে এসে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ হোসেন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময় ছিল এবং আগামীতেও থাকবে।বহিরাগতরা এভাবে ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে। হামলাকারী বহিরাগতদের গ্রেপ্তার ও যথাযথ শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের যেকোনো কর্মসূচিতে পাশে থাকবে ছাত্রলীগ।
অন্যদিকে কারমাইকেল কলেজ শিক্ষার্থী পরিষদের আহ্বায়ক রেজওয়ান আহমেদ সৌধ বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা সবসময়ই ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য অধ্যক্ষকে বহুবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু আজও আমাদের সেই বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিকেল হলেই ক্যাম্পাস জুড়ে টোকাই, বহিরাগতসহ বিভিন্ন জায়গার মানুষজনের আনাগোনা বাড়ে। প্রায়ই মোবাইল ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার খবর পাই আমরা। এতে করে আমাদের ক্যাম্পাসে আমরা নিজেরাই অনিরাপদ হয়ে পড়ছি। এই অবস্থার অবসানে কলেজ প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণসহ হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এই ছাত্রনেতা। কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে আমার শিক্ষার্থী নয় আমার সন্তানদের উপর হামলা করা হয়েছে। আমরা কলেজ আইনগত ব্যবস্থা নিতে মামলা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি তুলেছে, সেটিও আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করবো।
রংপুর মহানগর পুলিশের তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল কাদের বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সিরাজুল ইসলাম মিন্টু সহকারী অধ্যাপক ইসলামের ইতিহাস বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। সেখানে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আকাশ, খাইরুল ইসলাম, রবিউল হাসান ,হৃদয়, ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।