শীতের শেষ মাস মাঘ বিদায় নিলেও এখনো পুরোপুরি কাটেনি শীত। দিনে গরম থাকলেও রাতে গ্রামীণ জনপদে শীত জেকে বসছে। অপরদিকে নানা ফুলের সৌন্ধর্য আর মন মাতানো ঘ্রাণ নিয়ে আগমন ঘটেছে ঋতুরাজ বসন্তের। গ্রাম-বাংলার রুপ বৈচিত্রের এই অপরুপ সৌন্ধর্যের সাথে তাল মিলিয়ে আম গাছগুলোতে ধরেছে থোকা থোকা মুকুল। আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত রূপসা উপজেলা এলাকার প্রকৃতি।
গ্রামীণ-জনপদ বেষ্টিত এ উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে আমগাছ। মধু মাসকে রঙ্গিন করতে জুড়ি নেই নিজ বাড়িতে বেড়ে ওঠা এসব আম গাছের। অতিথি আপ্যায়নেও যথেষ্ট কদর রয়েছে আমের। সেই আম গাছে থোকা থোকা মুকুল প্রকৃতিকে যেন নতুন রুপে সাজিয়ে তুলেছে। মুকুলেরভারে নুয়ে পড়েছে আম গাছের ডালপালা। উপজেলা এলাকায় দিন দিন বাড়ছে হরেক রকমের সুস্বাদু আমের চাষ। বাগান বা বাড়ির আঙ্গিনা, পুকুর পাড় ও রাস্তার পাশে রয়েছে এসব আম গাছ। আমের মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ ও সুনশান নিরবতা ভেদ করে গাছে গাছে মধু সংগ্রহ করতে আসা মৌমাছিরা গুন গুন করছে। বাণিজ্যিকভাবে আম বাগান গড়ে তোলা চাষীরা সোনালী স্বপ্ন বুকে ধারণ করে আমের মুকুল পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে। আম গাছে সেচ দেওয়াসহ আমের মুকুলে রোগবালাই দমনে বিভিন্ন কীটনাশক স্প্রে করছে তারা।
তবে আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরা। মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুল আসতে শুরু করেছে বাগানসহ ব্যক্তি উদ্যোগে লাগানো আম গাছগুলোতে। তবে এ উপজেলায় সব ধরণের গাছে বেশি মুকুল ফুটেছে। সেই মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে বাগান মালিকদের চোখে ভাসছে স্বপ্ন। এসব আমের মধ্যে রয়েছে হিমসাগর, আ¤্রপালি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া ও ফজলি। ইতোমধ্যে এসব গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। গাছের পুরো মুকুল ফুটতে আরও কয়েক সপ্তাহ লাগবে। বাগান মালিকরা জানান, মুকুল আসার পর থেকেই তারা গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন। মুকুলকে রোগ বালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ স্প্রে করছেন তারা। উপজেলার সামন্তসেনা গ্রামের বাসিন্দা আজমল ফকিরের তিন বিঘার একটি আম বাগান রয়েছে। ওই বাগানে হিমসাগর ও আম রুপালি জাতের ২১৫টি আম গাছ রয়েছে। তিনি বলেন, বাগানের গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। বিগত বছরগুলির মত এবছর শীতের কুয়াশা খুব একটা পরিলক্ষিত না হওয়ায় আমের মুকুল সুরক্ষিত রয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে এবছর আমের বাম্পার ফলন হবে। রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে রূপসা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ১৩০ হেক্টর জমিতে আম গাছ রয়েছে। আমের ফলন যাতে ভালো হয় তার জন্য কৃষি অফিসের মাধ্যমে চাষীদের সকল প্রকার সহযোগীতা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আম গাছে মুকুল আসার সময়কালে ঘনকুয়াশায় বেশিরভাগ মুকুল নষ্ট হয়ে যায়। তবে এবছর তেমনটা দেখা যাচ্ছেনা। কোন প্রকার প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে এসব আম গাছ থেকে এক হাজার ১৭০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে।