বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে হাজার বছরের খাল ভরাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি খালের মাঝে ১৬ টি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের জন্য পুকুর করা হয়েছে। তবে সর্বশেষ মাস দেড়েক হলে খালটির শুরুতে উজানে মাটি ভরাট করে মুখ বন্ধ করা হচ্ছে। উভয় পাশে আবাদি জমির কম পক্ষে দুই ইউনিয়নের তিন হাজার একর জমির পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকরা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একারণে তিন গ্রামের মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে বগুড়া সারিয়াকান্দি সড়কের ঠাটি ব্রিজের নিচে প্রবাহমান খাল রয়েছে। স্থানীয়রা খালের নাম রেখেছেন বারো মাসি খাল। ফুলবাড়ী ইউনিয়নের পূর্বে রামনগর গ্রাম ও নারচি ইউনিয়নের দক্ষিণে সাহা পাড়া গ্রামের মধ্যে দিয়ে খাল প্রবাহমান। খালের দুই ধারে হাজার হাজার একর আবাদি জমি রয়েছে, হরেকরকমের আবাদ করে থাকেন চাষীরা। নারচী ইউনিয়নের সারিয়াকান্দি ফেরিঘাটের দক্ষিণে বাঙালি নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে রামনগর গ্রামের মধ্যে একেবেকে পড়ছে আমতলি গ্রামের নিকট সুখদহ নদীতে। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ কিলোমিটার, চওড়া ৩০ মিটারের মতো। খালের ওপর ঠাটি ব্রিজ ছাড়াও মেইনরোডে গরুমারা ব্রিজ ও রামনগর গ্রামের মধ্যে সেতু রয়েছে। প্রভাবশালীরা সম্প্রতি এ খালের প্রায় ১৬ টি স্থানে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষ করছেন। অপরদিকে খালটির বাঙালি নদী সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে উজানের প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। আর এ অবৈধ বালুগুলো উত্তোলন করা হচ্ছে বাঙালি নদী থেকে। প্রায় দেড় মাস ধরে বালু ভরাটের কাজ চলছে। এ কারণে খালের হাজার বছরের ইতিহাস মুছে যেতে বসেছে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে মেইন রোডের রামনগর এবং গরুমারা সেতু। অপরদিকে ২ ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার একর ফসলি জমি জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এ খাল দেড় মাস হলো ভরাটের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মন্টু। অভিযোগে বলা হয় রেজাউল করিম মন্টু মন্ডল গায়ের জোড়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এ খাল ভরাটের কাজে অংশ নিয়েছেন।
উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের কৃষক রানা মিয়া বলেন, এ খালটি অত্যন্ত পুরাতন একটি খাল। আমার জন্মের পর থেকে খালটি দেখছি। এটি হাজার বছরের পুরানো খাল। ভরাট করা হলে ২ টি ইউনিয়নের হাজার হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। তাছাড়া এ খাল এখন স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে পুকুরে রুপান্তর করছেন। এটি ভরাট হলে কৃষকের অপুরনিয় ক্ষতি হবে আমাদের। একই এলাকার মকবুল হোসেন বলেন, এটি ব্রিটিশ আমলের একটি খাল। খালের অংশে আমার ৭০ শতক জমি আছে। তবে এ খালটি মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। খালে তেমন একটা খাস জমি নেই।
এ বিষয়ে কথা হলে সারিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম মন্টু বলেন, এগুলো আমাদের ক্রয়কৃত সম্পত্তি। পাঁচ জনের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছি। এগুলো রেকর্ডভুক্ত সম্পত্তি, আমি ভরাট করতেই পারি। এ বিষয়ে কথা হলে সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত ( অ. দা.) বলেন, আমরা সরজমিনে তদন্ত ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব সহ স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল বন্ধ কোনো ভাবে কাম্য নয়।