“ঘুম থেকে উঠে ফুল হাতে নিয়ে খালি পায়ের প্রভাত ফেরী শেষে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের ইচ্ছে ছিল খুব। কিন্তু গ্রামীন পরিবেশে বিদ্যালয়টিতে শহীদ মিনার না থাকায় এমন সুযোগ হয়নি আগে। এবার বিদ্যালয় আঙিনায় শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ায় সে লালন করা ইচ্ছাটি পূর্ণ হয়েছে। প্রথমবার ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। তাই আজ খুব ভাল লাগছে।” কথাগুলো বলছিলো নিয়ামতপুর উপজেলার মুন্দিখৈর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসলামি আক্তার তিসা। শুধু তিসাই নয় এমন অনুভ’তির কথা জানায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হুমাইরা, মুসফিকা ও লতা রাণী। তারা সকলেই জীবনের প্রথমবারের মত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে সকল ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেন করেছে আজ। শুধু মুন্দিখৈর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহীদ দিবসে তাদের বিদ্যালয়ের আঙিনায় নবনির্মিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা জানায় ভাষা শহীদদের। ভাষা শহীদদের প্রতি শিশু শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের এমন সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ায় তারা খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে কৃতজ্ঞতা জানায়।
উল্লেখ্য,ভাষা শহীদ ও বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং ভাষা ইতিহাসকে সমুন্নত রাখতে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ১২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব কটিতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় নিয়ামতপুর উপজেলা সদরের নিয়ামতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপজেলার ১২৮টি নবনির্মিত শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
জানা যায়, প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নিশ্চিত করতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ব্যক্তিগত তহবিল এবং বিদ্যালয়সমূহের রুটিন মেইনটেনান্স ও উন্নয়ন খাতের অর্থ দিয়ে উপজেলার ১২৮টি বিদ্যালয়ে একই আদলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষ ওবাইদুর রহমান ডালিম জানান, শহীদ মিনার নির্মাণের ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আজ ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পেয়েছেন। আগে শহীদ মিনার না থাকায় অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে কিংবা পাশর্^বর্তী কোনো উচ্চবিদ্যালয় অথবা কলেজের শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতো। তবে আজ তাঁরা নিজ বিদ্যালয় চত্বরেই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছেন। এমনকি পাশ্ববর্তী চাঁপাই নবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ভেরেন্ডী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেন করেন। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবদন করতে পেরে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুবই খুশী।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল আলম বলেন, নতুন প্রজন্মকে একুশ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের এ উদ্যোগ। মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সহযোগিতা সর্বোপরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় শতভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। আজ (২১ ফেব্রুয়ারী) ওই সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের বিদ্যালয়ের আঙিনায় নবনির্মিত শহীদ মিনারে প্রভাত ফেরী করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। এতে তারা যেমন খুশী তেমনি আমরাও সবাই আনন্দিত।
এ প্রসঙ্গে নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদ বলেন, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকার বিষয়টি জানার পর গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন আগামী বছর উপজেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ নিশ্চিত করা হবে। তারই অংশ হিসেবে খাদ্যমন্ত্রীর সহযোগিতায় উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই আদলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।