চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ১ নং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আহমদ হোসেন নামে এক বীরমুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মন্দাকিনী এলাকার নজর মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় মোঃ লোকমানের স্ত্রী নাহিদা সুলতানা (৩৫) নামে এক মহিলাকে গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশ আটক করেছে। আটককৃতকে বুধবার কোর্ট হাজতে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা মাজেদা বেগম (৩০) বাদী হয়ে চার জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো বেশ কয়জনকে বিবাদী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্হানীয় ও নির্যাতনের স্বীকার বীর মুক্তিযোদ্ধার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনকারী ও নির্যাতনের স্বীকার দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধীয় জায়গায়টি বীরমুক্তিযোদ্ধার পারিবারিক সম্পত্তি বলে দাবী করে। প্রতিপক্ষ গত বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) বেশ কিছু লোকজন নিয়ে পাকা দেওয়াল নির্মাণ করতে আসলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন বাধা দেন। বাধা অমান্য করে দেওয়াল নির্মাণ করতে থাকলে তারা ৯৯৯ ফোন করেন। ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল এসে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশ চলে গেলে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এই সময় বীরমুক্তিযোদ্ধা বাধা দিতে গেলে তাঁকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করেন এবং তাঁর বসত ভাংচুর করে বিরোধীয় জায়গায় দেওয়াল নির্মাণ করেন। নির্যাতনের ঘটনা গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহিদুল আলম স্হানীয় ইউ পি চেয়ারম্যান শওকত আলম শওকতকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিরোধীয় জায়গায় নির্মিত দেওয়াল উচ্ছেদ করেন।
এই ঘটনায় রাতে জায়গা অবৈধভাবে দখলের অভিযোগে নাহিদা সুলতানা নামে এক মহিলা পুলিশ আটক করে। এক মহিলাকে আটক ও থানায় মামলা রুজুর পর থেকে হামলাকারীর পরিবারের সদস্যরা ঘরের দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। নির্যাতিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন ঘটনার পর তিনি থানায় মামলা করতে গেলে ও থানা পুলিশ তাঁর মামলা গ্রহন করেনি বলে অভিযোগ করেন।
১ নং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলম শওকত জানান গত বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ওয়ার্ড মেম্বার ও গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে পাকা দেওয়াল নির্মাণ কাজ বন্ধ করেন। কিন্তু তারা চলে আসার পর পর পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করেন মেম্বারের কথা অমান্য করে। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহিদুল আলম নিজে ঘটনাস্হলে আসলে তিনিসহ গিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত দেওয়াল উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নুরুল আলম জানান,আমরা গত মঙ্গলবার রাতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সহ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর ইউএনও মাধ্যমে স্মারক লিপি প্রদান করা হয়। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন সবুজ বলেন, এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃত গৃহবধু নাহিদা সুলতানাকে বুধবার কারাগারে পাঠানো হয়। বাকিদের আটকের জন্য অভিযান চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেঃ শাহিদুল আলম জানান,সংবাদ পেয়ে তিনি গত মঙ্গলবার গভীররাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে জবর দখলকৃত জায়গাটিতে নির্মিত দেয়াল উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে আইনানুগ সহযোগীতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।
বিষয়টি সরোজমিন জানার জন্য গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাস্হলে গেলে নির্যাতনকারী প্রতিপক্ষের ঘরের দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি মুটো ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে ফোন ও বন্ধ পাওয়া যায়।