পোল্ট্রি শিল্প কৃষি শিল্পের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নে কৃষির পরই সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প। এখানে যেসব মানুষের জীবন জীবিকা জড়িত, তার প্রায় ৪০ শতাংশই নারী। গার্মেন্টস শিল্পের পর কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছে এ শিল্প। এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, প্রায় ১ লাখ প্রাণী চিকিৎসক, পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ, নিউট্রিশনিস্ট সরাসরি নিয়োজিত রয়েছেন। দেশে পোল্ট্রি শিল্প এখন হুমকির মুখে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারণে এ শিল্প বর্তমানে অস্তিত্ব হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে। নানা সংকটের কারণে ছোট ছোট খামার ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও খামারিরা ব্যবসা করতে পারছেনা। কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে নিঃস্ব হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। পোল্ট্রি সেক্টরে পুঁজিবাদী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের পোল্ট্রি শিল্প। খামারিরা মধ্যসত্ত্বভোগী শ্রেণীর হাতে জিম্মি হয়ে আছে। সংরক্ষণাগার না থাকায় তাদের উৎপাদিত ডিম কম দামে ফড়িয়াদের নিকট বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই খামারিরা তাঁদের উৎপাদিত দ্রব্যের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় টিকতে না পেরে এরইমধ্যে খামার গুটিয়েছেন বহু উদ্যোক্তা। এ শিল্পে অস্থিরতার কারণে ১০ থেকে ১২ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০৫ থেকে ২১০ টাকা এবং সোনালি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায়। ব্রয়লারের মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে নিম্নবিত্ত পরিবারের মধ্যে। প্রতিনিয়ত দাম বাড়ার কারণে দোকানিদের সঙ্গে ক্রেতাদের চলছে তর্কবিতর্ক। বিক্রেতারা বলছেন দাম বাড়ার কারণে মুরগি আনা কমিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় দাম বাড়ায় তাদের বিক্রি কমেছে বলেও জানিয়েছেন তারা। সুতরাং এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আগে দেশের খামারিদেরকে দ্রুততার সাথে মুক্ত করতে হবে। পোল্ট্রি খাতের উন্নয়নে বিদেশী জিম্মিদশা থেকে বের হতে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং পোল্ট্রি শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৌড়াত্ব কমাতে হবে। বিদেশী কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারবে কিংবা কি পরিমাণ লভ্যাংশ নিয়ে যেতে পারবে তার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশে পোল্ট্রির উৎপাদনে ঝুঁকি নিরসনের জন্য একটি ন্যাশনাল প্লান দরকার। পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারী সহযোগিতা না থাকায় একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হওয়া সত্ত্বেও অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে দেশের এই শিল্পটি। পোল্ট্রি খামারগুলোকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহলে অন্তত কিছুটা স্বস্তি ফিরে পাবে দেশের মানুষ।