পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে তুলনামূলক নবীন হলেও শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে প্রতিষ্ঠার এক যুগ পূর্তি উদ্যাপন করেছে শিক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের বাতিঘরখ্যাত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা, গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বমহিমায় ভাস্বর। একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষক, মেধাবী শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় সাফল্যের এক যুগ পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের একটি লেখায় উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অজানা সব তথ্য। উপাচার্য তার লেখার ভাষা উল্লেখ করেন, অনিন্দ্যসুন্দর কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে স্থাপিত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের স্বপ্নের বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশাল নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা কীর্তনখোলা নদীর অপরূপ স্নিগ্ধতার রেশ না কাটতেই দেখা মেলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক সৌন্দর্য মুহুর্তেই মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলে। ঋতুভেদে প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নবরূপে সজ্জিত হয় ক্যাম্পাস। শরতে শুভ্র কাশফুলে ছেয়ে যায়, বসন্তে পলাশ ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে, শীতে কুয়াশার চাদর মুড়ি দেয় পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের আড্ডা-গানে মুখরিত হয়ে ওঠে মুক্তমঞ্চ, সবুজ প্রাঙ্গণ ও করিডোর।
স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে তৎকালীন বরিশাল বেলস্ পার্কে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় তার ভাষণে ঢাকার বাইরে বরিশালে একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণাকে বাস্তবে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল সদর উপজেলার কর্ণকাঠিতে ৫০ একর জমিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের যৌক্তিক প্রত্যাশা, দাবি ও লালিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন শুরু হয়।
পরের বছর ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল ক্যাম্পাসের কলেজ ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম পরিচালনা এবং শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের শুভ সূচনা ঘটে। প্রতিষ্ঠাকালীন চারটি অনুষদের অধীনে ছয়টি বিভাগের ৪০০ শিক্ষার্থী নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগে প্রায় ৯ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ১৯৯ জন শিক্ষক, ১১৬ জন কর্মকর্তা এবং ১৪৪ জন কর্মচারীর সমন্বয়ে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির কারিগর হিসেবে জ্ঞানের আলো বিলিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রতিটি সদস্যর আন্তরিকতা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক, গবেষণা, সহশিক্ষাসহ বঙ্গবন্ধুর দর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি খুব ভালোভাবেই করে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষণার বিস্তার, মুক্তচিন্তার বিকাশ এবং সৃজনশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর একটি কার্যকর গবেষণাধর্মী স্মার্ট উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তরুণ প্রজন্মের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তাচেতনা ও দর্শনকে ছড়িয়ে দিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময়ে নানা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : অর্জন ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক স্মারক সংকলন প্রকাশ, অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদ থেকে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে জার্নাল প্রকাশ, শিক্ষার্থীদের লেখায় ‘তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের স্মরণিকা প্রকাশ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক ওয়েবিনার, বঙ্গবন্ধু অলিম্পিয়াড, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক দেয়ালিকা প্রদর্শন, ‘পদ্মা সেতু এবং এর আর্থসামাজিক প্রভাব’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বৃক্ষরোপণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
এসব অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান আয়োজনকে করে তোলে গুরুত্ববহ। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ নীতিমালা সংস্কার, সেশনজট দূরীকরণ, পরীক্ষার ফলাফল, লাইব্রেরি ও অর্থ দপ্তরের অটোমেশনসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়মিত পদোন্নতির ব্যবস্থার পাশাপাশি দ্বিতীয় পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রযুক্তিনির্ভর মেধাবী ও দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শ্লোগানে সাফল্যের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি দিনভর জমকালো আয়োজন করা হয়।
যুগপূর্তির এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী পদমর্যাদা) আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি বলেন, ইতিহাস একদিনে তৈরি হয়না। আর বাঙালীর ইতিহাস হাজার বছরের ইতিহাস। যে জাঁতি নিজেদের ইতিহাস জানে না, সে জাঁতি কোনদিনও মর্যাদাশীল জাঁতি হতে পারেনা। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি আরও বলেন, তোমাদের হাতেই গড়ে উঠবে আগামীর বাংলাদেশ। বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাসকে রক্ষা করতে হলে তোমাদের এ জাতির সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও তোমাদের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদেরকে বিকশিত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এফবিসিসিআই’র পরিচালক সেরনিয়াবাত মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহ।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিশ^বিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন ড. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাহাউদ্দিন গোলাপ, গ্রেড ১১-১৬ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শাহাজাদা খান, গ্রেড ১৭-২০ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আরিফ সিকদার, শিক্ষার্থী নয়ন বিশ^াস, তিথি ঢালী, মোয়াদ হোসেন, ফারহানা আফরিন প্রমুখ।
এর আগে সকালে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অতিথিবৃন্দরা বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধণ করেন। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বিন¤্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে ওইদিন সকাল সাড়ে ১০ টায় আনন্দ র্যালি বের করা হয়। সবশেষে বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপক ॥ গত ১২ বছরে অনেক সম্ভাবনা আর সাফল্য আসলেও নানা সংকটের কারণে এখনো পূর্ণাঙ্গতা পায়নি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরই নতুন নতুন বিভাগ চালু হচ্ছে, এতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, পাশপাশি বাড়ছে নানামুখী চাহিদা। কিন্তু সেসব চাহিদা পূরণে অবকাঠামোসহ অন্যান্য উন্নয়ন পিছিয়ে আছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নানা সংকটের মধ্যেই তারা পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছেন। তবে পাঠদান কক্ষ, পরিবহন ও গ্রন্থাগারে বইয়ের ব্যাপক সংকট রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। এরমধ্যে মাত্র একজন অধ্যাপক, ৪৬ জন সহযোগী অধ্যাপক কর্মরত। বাকিরা সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষকস্বল্পতার পাশাপাশি নেই সহ-উপাচার্য, স্থায়ী রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ পাঁচটি অনুষদের ডিন। শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি করে চারটি আবাসিক হল থাকলেও সেখানে সর্বোচ্চ ১২শ’ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। ফলে আট হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া জাহান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এক যুগ পেরিয়ে গেলেও অনেক সংকট এখনও রয়ে গেছে। শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ- সংকট আছে। একটি ক্লাসরুম দুটি বিভাগকে আবার কখনো কখনো আরও বেশি বিভাগকে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয়। একটি বিভাগের পাঠদান শেষ না হতেই আরেকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা এসে বাইরে অপেক্ষায় থাকেন। এটা শিক্ষার্থীদের জন্য বিড়ম্বনার বিষয়।
গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত বই না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের চার বছরে ৩২টি কোর্স করতে হয়। এসব কোর্সের অধিকাংশ বই আমাদের গ্রন্থাগারে নেই। অনলাইনে বিদেশি জার্নাল ঘেঁটে পড়াশোনা করতে হয়। ইন্টারনেটের বিভিন্ন আর্টিকেলই একমাত্র রিসোর্স।
রয়েছে নানা অর্জন ॥ নানা সংকটের মধ্যেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশ কিছু সাফল্য রয়েছে। ২০২০ সালে এক গবেষণায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ইলিয়াস মাহমুদ। তিনি ‘পিট ল্যাট্রিন’ বা আধাপাকা শৌচাগার থেকে ভূগর্ভস্থ পানিদূষণ কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করেন। তার প্রবন্ধ আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি (এসিএস) থেকে প্রকাশিত গবেষণা পত্রিকা ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’তে ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়। গবেষণাকর্মটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক অ্যাকাডেমিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা ‘নেচার’ পরিচালিত ‘নেচার ইনডেক্স ২০২০’-এ স্থান পায়। ৮২টি গবেষণাপত্রের মধ্যে ওই গবেষণাপত্র সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণায় অনুদান পেয়ে অ্যাডভান্স রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে অ্যাডভান্স ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে গবেষণা করেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজ আলম। একইভাবে ২০২১ সালে বায়ো মেমব্রেন নিয়ে গবেষণা করে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ‘বেস্ট পোস্টার অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছেন বরিশাল বিভাগের গবেষক দল। যার নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও প্রক্টর খোরশেদ আলম।
শিক্ষার্থীদের অর্জন ॥ নেতৃত্ব, জ্ঞান বিকাশ, উদ্ভাবন-আবিস্কার ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গৌরবময় স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেছেন। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত স্পাইক এশিয়া ফেস্টিভ্যাল অব ক্রিয়েটিভটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী গোলাম রব্বানী। যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়ার সুযোগ পেয়ে ওহিও ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষা (মাস্টার্স প্রোগ্রাম) গ্রহণ করছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল-আমিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিয়মিত সাফল্য বয়ে আনছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা কৃষি কাজে ব্যবহার উপযোগী ড্রোন উদ্ভাবন করেছেন। অন্ধদের জন্য টকিং গ্লাস আবিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছে অ্যাপস, চালু করেছে অনলাইন রেডিও এবং ওয়েবসাইট। উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, তুরস্কসহ ইউরোপের দেশগুলো থেকে স্কলারশিপ ছিনিয়ে এনেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পিছিয়ে নেই চাকরির বাজারেও। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষ গ্রাজুয়েটরা দেশ পেরিয়ে গুগল বা টেক জায়েন্ট কোম্পানিতে এখন চাকরির সুযোগ পায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে তুলেছেন। পাবনা বিজ্ঞান প্রযুক্তি, যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।