নানামুখী সমস্যায় ঢাকা মহানগরের জীবনযাত্রা ক্রমেই আরও বেশি মাত্রায় দুর্ভোগময় হয়ে উঠছে। সবচেয়ে প্রকট ও জটিল সমস্যাটি হলো যানজট। রাজধানী ঢাকায় বাস করে ১১.২ শতাংশ মানুষ,প্রতি একরে প্রায় ৫০০ জন মানুষ বাস করে। ফলে এত মানুষের চাপ সামাল দিতে পারছে না ঢাকা। এতে করে ঢাকার রাস্তায় যানজট লেগেই থাকছে। দিন যত যায় এই শহরের যানজট যেন ততই বৃদ্ধি পায়। যানজটের কারণে বিশ্বে অচল শীর্ষ ১০টি নগরীর মধ্যে রাজধানী ঢাকা অনেক আগেই ঠাঁই করে নিয়েছে। সড়কের তুলনায় রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট নগরবাসীর জীবনকে বিভীষিকাময় করে তুলছে। যানজট এখন শুধু রাজধানীই নয়, জাতির জন্যও এক বিড়ম্বনার নাম। দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছে এই ভয়ংকর সমস্যা। যানজটের কারণে যে সময়ক্ষেপণ ঘটছে, অর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। এই সমস্যা উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পরিকল্পিত নগরীতে প্রয়োজন মোট আয়তনের ২৫ ভাগ রাস্তা। রাস্তার অপ্রতুল ও অপরিকল্পিত ব্যবস্থা ঢাকা মহানগরীর যানজটের প্রধান কারণ। রাজধানী ঢাকার যানজটে প্রতিদিন ৫০ লাখ শ্রমঘণ্টা অপচয় হয়। অথচ এ শহরে গণপরিবহনের ৮০ শতাংশই যন্ত্রচালিত এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন। বিগত ১০ বছরে রাজধানী ঢাকার যান চলাচলের গতিবেগ ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটারে নেমে এসেছে যা ২০২৭ সালের মধ্যে ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটারে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়,বিশাল জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত রাজধানী ঢাকা মেগাসিটিতে যানবাহন চলাচলে যে জটের সৃষ্টি হয় এবং তাতে যে শ্রমঘণ্টা অপচয় হয়, এর ফলে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। শুধু মাত্র ঢাকার যানজট ৬০ শতাংশ কমানো গেলে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব। নগরীতে যন্ত্রচালিত যানবাহনের সংখ্যা অনেক। এর পাশাপাশি অযান্ত্রিক যান রিকশার সংখ্যাও প্রচুর। দ্রুতগতির যান্ত্রিক যানের সঙ্গে একই সড়কে চলছে ধীরগতির যান ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জ্যামের। মূলত অপরিকল্পিত নগরায়নই এজন্য দায়ী। একটি শহরে সড়কপথের পাশাপাশি বিকল্প যোগাযোগব্যবস্থা থাকলে সড়কে চাপ পড়ে কম। একতলা বাসের পরিবর্তে যতটা সম্ভব দোতলা বাস চালানোর ব্যবস্থা নিলে যানবাহন কিছুটা কমবে। পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না রাখলে ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন করা যাবে না। যে কাজগুলো শুধু ঢাকা ছাড়া অন্য কোথাও হয় না, সে কাজগুলো প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে করার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের যেসব এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই সেসব এলাকা চিহ্নিত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে কর্মের জন্য ওইসব এলাকার মানুষকে আর ঢাকায় আসতে হবে না, এতেও যানজট কিছুটা কমবে। ঢাকা মহানগরের মোট সড়কের প্রায় ৫০ শতাংশজুড়েই চলাচল করে ব্যক্তিগত গাড়ি, অথচ এগুলো বহন করে মাত্র ১২ শতাংশ যাত্রী। কিন্তু ৫০ শতাংশ বড় বাসে প্রায় ৮৮ শতাংশ যাত্রী পরিবহন সম্ভব। রাজধানীর যানজটে শুধু জনদুর্ভোগ ছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক বিশাল ক্ষতির কথা মাথায় রেখে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যানজটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। ঢাকার যানজট সমস্যা রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয় তাই সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে শুধুমাত্র তাইলে ঢাকা একদিন যানজট মুক্ত নগরীতে রূপান্তরিত হবে।