পাহাড় কাঁটার ফলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে তাতে কারো দ্বিমত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ক্ষতি জেনেও পাহাড় কাটা থেমে নেই। দেশের বিভিন্ন জায়গায় একরকম অবাধে চলছে পাহাড় কাটা। আইনগতভাবে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবে সেই আইনের প্রয়োগ নেই। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত পাহাড় কাঁটার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনে-রাতে সমানে চলছে পাহাড় কাটা। পাহাড়ের মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায় কিংবা নিচু জমি ভরাটের কাজে। এর জন্য গড়ে উঠেছে নানা ধরনের চক্র। তারা মাটি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে। প্রশাসন এই পাহাড় কাটা থামাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। জানা যায়, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সিলেট ও মৌলভীবাজারে অঞ্চলে ব্যাপক হারে পাহাড় কাটা চলছে। সেসব অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাসহ রাজধানীর বড় বড় শিল্পপতিরা সেসব পাহাড় দখল করছেন। শুধু তাই নয়, তারা বিক্রি করছেন সরকারি পাহাড়ের দখলস্বত্ব। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে কাউকে কাউকে জরিমানা করলেও, কিন্তু তাতে বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা। জরিমানা দিয়ে অনেকে পুনরায় পাহাড় কাটছে এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে অনেক। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, জরিমানা দেয়া মানে পাহাড় কাঁটার বৈধতা পাওয়া। পাহাড় কাটা বন্ধে ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পাহাড় কাঁটার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। রুল শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায়ে পাহাড় ও টিলা কাটা রোধে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে পাহাড় ও টিলা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ প্রতিপালনেরও কোনো অগ্রগতি দেখা যায় না। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০১০ সালে আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরো কঠোর করা হয়েছে। তাতে লাভ কী, যদি আইনের প্রয়োগ না থাকে। জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাঁটার যন্ত্র, ট্রাক ইত্যাদি জব্দ করা হয়। কিছুদিন পরই দেখা যায়, পাহাড় কাটায় জড়িতরা সেসব ফেরত পেয়ে যায়। তাই প্রশাসনের ‘লোক-দেখানো’ অভিযানের ওপর কোনো আস্থা নেই জনগণ ও পরিবেশবাদীদের। তারা চান, অবিলম্বে পাহাড় কাটা বন্ধ হোক। পাহাড়খেকোরা আইনের আওতায় আসুক। আমরাও আশা করি, সরকার পাহাড় কাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।