শোক, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর আলোচনার মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরায় সাহসী সাংবাদিক আনিসুর রহিমের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণসভা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক শেখ আজহার হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের মহাসচিব দীপ আজাদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফ, সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা-স্কাস চেয়ারম্যান এবং রিফিউজি অপারেশন্স অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন টিমের ন্যাশনাল এনজিও বিষয়ক প্রতিনিধি জেসমিন প্রেমা, উদীচীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুখেন রায়, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক পলাশ আহসান, বিএফইউজের সহ-সভাপতি আফরোজা আক্তার ডিউ, ওয়াটারকিপার বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও বাপার কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ নূর আলম শেখ, বিএফইউজের যুগ্ম-মহাসচিব হেদায়েত হোসেন মোল্লা, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি ও লেখক-গবেষক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, পার্লামেন্ট নিউজের উপণ্ডসম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র প্রমুখ।
স্মরণসভায় শ্যামল দত্ত বলেন, অধ্যাপক আনিসুর রহিম ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, শিশু সংগঠক, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের নতা ও নাগরিক সমাজের নেতা ছিলেন। সাতক্ষীরায় আধুনিক সাংবাদিকতার নবধারার সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন সৃজনশীল ব্যক্তি, নিরহংকার, নির্লোভ মানুষ। একজন সমাজ সংস্কারক। অসাম্প্রদায়িক বিনয়ী ও নম্র স্বভাবের মানুষ। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। সুলেখক, সুবক্তা, সুচিন্তক, সমালোচক, অর্থনীতিবিদ, দেশ ও মানব প্রেমিক মানুষ ছিলেন মোঃ আনিসুর রহিম।
শ্যামল দত্ত বলেন, মোঃ আনিসুর রহিম একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি। তিনি আরও বলেন, আজ যারা একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পদক পাঁচ্ছেন তাদের চেয়ে মোঃ আনিসুর রহিমের যোগ্যতা কোন অংশে কম নয়। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক বেশি।
শ্যামল দত্ত বলেন, একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পদক হয়তো সাংবাদিক আনিসুর রহিমের জন্য কিছু হবে না, কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। আনিসুর রহিম যে আলোর পথের বাতি জ্বালিয়ে গেছেন সেই আলোর পথে চলার জন্য তাঁর জীবন ও কর্মকে ছড়িয়ে দিতে হবে।
দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সসম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, সমাজকে আলোকিত করতে আনিসুর রহিমের মতো যারা অবদান রেখেছেন তাঁদের খুঁজে বের করে স্বীকৃতি দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অনন্য আনিসুর রহিমকে যাতে রাষ্ট্র সেই স্বীকৃতি দেয় সেজন্য যা যা করা দরকার জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তা করা হবে। এজন্য রাজধানী ঢাকার সাংবাদিকদের সাথে সাতক্ষীরার সাংবাদিকদের সমন্বয়ে আলোচনা করতে হবে।
স্মরণ সভায় অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান বাবু, প্রয়াত আনিসুর রহিমের সহধর্মিণী সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ দিলারা বেগম, উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা নূরুজ্জামান, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও দৈনিক নিখাদ খবরের সম্পাদক আ হ ম তারেক উদ্দীন, সচেতন নাগরিক কমিটির নেতা অধ্যাপক পবিত্র মোহন দাস, প্রয়াত আনিসুর রহিমের ভাই আহমেদুর রহিম, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশিং কমিটির সভাপতি ডাক্তার আবুল কালাম বাবলা, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আবদুল হামিদ, কবি ও সাহিত্যিক গাজী শাহজাহান সিরাজ, কবি নাজিমউদ্দিন, সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মিলটন, দৈনিক পত্রদূতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি, উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, স্মৃতি একাত্তরের বৈদ্যনাথ কুন্ডু, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুল বারী, বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ, জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু আফফান রোজ বাবু, প্রাক্তন শিক্ষিকা মিনতি চৌধুরী, সাংবাদিক রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, আবুল কাশেম, অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, নারী নেত্রী জ্যোৎস্না দত্ত, নিত্যানন্দ সরকার, আনোয়ার জাহিদ তপন, মনির উদ্দিন, রবিউল ইসলাম রবি, সুধাংশু শেখর সরকার, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, মনিরুল ইসলাম, আবদুস সামাদ, আলিনুর খান বাবুল, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, কমরেড আবুল হোসেন, আবদুস সাত্তার, ওহাব আলী সরদার প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাতক্ষীরার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।
এরআগে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। ভিডিও ডকুমেন্টারিতে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা ও বরগুনা জেলার বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ।
এর আগে কালিগঞ্জ প্রেসক্লাব, দ্য এডিটরস্, কালিগঞ্জ রিপোর্টার্স ক্লাব, দৈনিক পত্রদূত, বিডিএফ প্রেস ক্লাব, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, সাতক্ষীরা সাংবাদিক ঐক্য, দৈনিক সাতক্ষীরার সকাল, স্বদেশ, সাতক্ষীরা মহিলা পরিষদ, দৈনিক ভোরের কাগজ, আমরা৭১ এসএসসি পি এন স্কুল, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জাতীয় পার্টি, জাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জেলা বাসদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, জেলা ভূমিহীন সমিতি, সাতক্ষীরা প্রি ক্যাডেট স্কুল, সাতক্ষীরা ডে নাইট কলেজ, সম্মিলিত সংস্কৃতিক জোট সাতক্ষীরা জেলা শাখা, উদীচী, সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্ভীক সাংবাদিক মোঃ আনিসুর রহিমের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রয়াত আনিসুর রহিমের আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর 'অনন্য আনিস' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভূমিহীন আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, জলাবদ্ধতা আন্দোলন সহ সকল ন্যায় ভিত্তিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক আনিসুর রহিম। তিনি শোষিত বঞ্চিত নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাতক্ষীরাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অবহেলিত জনপদের উন্নয়নে তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আন্দোলন করেছেন। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে তার জীবন ও কর্ম কে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক আনিসুর রহিম চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সুন্দরবন ভ্রমণের পথে মুন্সিগঞ্জে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক সাতক্ষীরা চিত্রের সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক। জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে সাতক্ষীরা জেলার যে কোন সংকটে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।