নীলফামারীর সৈয়দপুরে অব্যাহত লোড শেডিংয়ের মধ্যেও খুদেবার্তা (এসএমএস) দিয়ে লোড বাড়ানোর হুমকি দেয়া হয়েছে। গ্রাহকদের আইনি নোটিশের হুমকিতে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্হানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে।
প্রতিদিন চাহিদামত বিদ্যুৎ পাঁচ্ছেন না গ্রাহকরা। তার ওপর লোড বাড়ানোর হুমকি। সম্প্রতি সৈয়দপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র থেকে গ্রাহককে ওই এসএম এস পঠানো হয়েছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে আগেই মূল্য পরিশোধ করে তারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। তারপর লোড শেডিংয়ের কারণে দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না।
প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৬ টা থেকে সকাল সাড়ে ৯ টা, দুপুর ১ টা থেকে আড়াইটা, আবার সন্ধ্যায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা মিলে প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা কাটাতে হচ্ছে বিদ্যুৎবিহীন। সেচ মৌসুম পুরোদমে শুরু না হলেও বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ের কারণে চিকিৎসা সেবা, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, কল-কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরেছে। আর দির্ঘদিন ধরে এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ জনপদের সব শ্রেণীর গ্রাহকদের।
শহরের বাঁশবাড়ী মহল্লার মকবুল হোসেন বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে (১৪ ফেব্রুয়ারী) ওই বার্তাটি পাঠিয়ে গ্রহকদের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন প্রদর্শন করেছে স্হানীয় বিদ্যুৎ কর্তপক্ষ। ওই মেসেজে বলা হয়,আপনার ব্যবহৃত লোড অনুমোদিত লোডের চেয়ে বেশি। তাই মেসেজ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে অতিরিক্ত লোড অনুমোদন করাতে হবে। অন্যথায় বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কর্তৃপক্ষের এমন হুমকিমূলক বার্তা পেয়ে তোলপাড় শুরু হয় এখানকার ৪৯ হাজার ৩ শ' ৮৮ জন গ্রাহকের মধ্যে। তাদের অনেকেই ছুটে যান সৈয়দপুর বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রে। এ ম্যাসেজ নিয়ে বিক্ষুদ্ধ গ্রাহকদের সাথে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকতা ও কর্মচারীদের বাকবিতন্ডার ঘটনাও ঘটে। পরে উত্তেজিত গ্রাহকদের বুঝিয়ে শান্ত করেন সংশ্লিষ্টরা।
মঞ্জুর আলম নামে এ গ্রাহক জানান, প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে আমরা টাকার বিনিময়ে আগেই বিদ্যুৎ কিনে আমরা ব্যবহার করি। তাহলে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কেন এমন আইনি নোটিশ দিয়ে আমাদের মর্যাদাহানী করবে। বিদ্যুৎ বিভাগ একটি অত্যাবশ্যকীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। গ্রহকদের সাথে এমন আচরণ ঠিক হয়নি। এজন্য তাদের গ্রহকের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড সৈয়দপুর বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্র কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, এ উপজেলায় আবাসিক, বাণিজ্যিক, ক্ষুদ্র- মাধ্যম ও ভারি শিল্প, রাস্তার বাতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, অটো চার্জিং ও সরকারি মিলে মোট ৪৯ হাজার ৩ শত ৮৮ জন গ্রাহক রয়েছে। বিপুল সংখ্যক এ গ্রাহকরা শুরু থেকেই প্রয়োজনের তুলনায় কম লোড নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এতে মিটার, সার্ভিস তার ও শর্ট সার্কিটে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে নেসকো গ্রাহকদের লোড বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে। এতে কিলোওয়াড প্রতি মাসে অতিরিক্ত মাত্র ৩৫ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। কোন প্রকার বাড়তি ব্যায় হবে না।
সূত্র মতে, জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদানুপাতে সরবরাহ কম থাকায় বর্তমানে লোড শেডিং হচ্ছে। এখানকার গ্রাহকদের জন্য মাসে ২৫ মেগাওয়াড বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেখানে জাতীয় গ্রিড থেকে মাত্র ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াড সরবরাহ মিলছে। যার ফলে লোড শেডিং হচ্ছে। আসন্ন সেচ মৌসুমের চাহিদা বাড়বে ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াড। বাড়তি সরবরাহ না মিললে লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে।
সৈয়দপুর বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রের (নেসকো) আবাসিক নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া বলেন, গ্রাকদের জন্য মোবাইলে খুদেবার্তা প্রধান অফিস থেকে দেয়া হয়েছে। তাই এ নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাইনা।