কিশোরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত হাওর অধ্যুষিত মিঠামইন উপজেলাসহ গোটা জেলাবাসী। তার আগমন উপলক্ষে গোটা কিশোরগঞ্জই সেজেছে নবরূপে। শুভেচ্ছা জানিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকশ তোরণ। আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার দুই পাশে টাঙানো হয়েছে হাজার হাজার ব্যানার ফেস্টুন। আর সুধী সমাবেশকে সফল করতে দলীয়ভাবে নেওয়া হচ্ছে নানান পদক্ষেপ। ব্যস্ত সময় পার করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে জেলার ১৩টি উপজেলায় ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ১০ টার দিকে মিঠামইন আসবেন। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধন করবেন। পরে মিঠামইন হেলিপ্যাড মাঠে এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সরেজমিনে দেখা গেছে, মিঠামইন উপজেলায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকা- তুলে ধরে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের ছোট-বড় ব্যানার ও সরকারের উন্নয়নের চিত্র শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এমন চিত্র শুধু মিঠামইনেই নয়, পুরো জেলায়ই প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বইতে শুরু করেছে। বিশেষ করে হাওরের প্রবেশদ্বার চামড়াঘাট, বালিখলা, মিঠামইন ফেরিঘাট- এসব গুরুত্বপূর্ণ মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় সজ্জিত তোরণ, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শিল্পপতি আলহাজ¦ এরশাদ উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে করিমগঞ্জের হতে বালিখলা পর্যন্ত নির্মাণ করেছেন সুসজ্জিত ১০টি তোরণ ও অসংখ্য ফেস্টুন ব্যানার। সেইসাথে গত ১০/১২ দিন ধরে বালিখলা, সূতারপাড়া, খাগশ্রী, চংনোয়াগাওসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মতবিনিময় সভা করে পাঁচ হাজারের অধিক মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্মোধিত শুভেচ্ছার গেঞ্জিসহ সমাবেশস্থলে নিয়ে যেতে প্রস্তুত রেখেছেন ২০/২২টি ট্রলার। এমন এরশাদ উদ্দিনের মতো আরও অসংখ্য নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফল করার জন্য কাজে নেমেছেন।
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হক নূরু বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে মহাসমাবেশে পরিণত করার উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে নদীপথে দুই সহস্রাধিক ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের। যা দিয়ে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মিঠামইনের সমাবেশস্থলে আসবেন।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে ইতোমধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ২৭ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মিঠামইনে চলে আসবেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মিঠামইনে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধন করবেন। পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে কামালপুর রাষ্ট্রপতির পৈতৃক বাড়িতে মেহমান হবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে আপ্যায়ন করা হবে হাওরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও অষ্টগ্রামের বিখ্যাত পনির দিয়ে। এই পনির মুঘল রাজ দরবারেও যেতো বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও অষ্টগ্রামের পনির অনেক পছন্দ করেন। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায়। সেখানে তিনি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন-কর্মকা- জনতার মাঝে তুলে ধরে বক্তব্য দেবেন।
রাষ্ট্রপতিপুত্র আরও জানান, মিঠামইনে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে কেন্দ্র করে হাওরবাসীর মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের হাওরবাসীর আর কোনো চাওয়া নেই। হাওরের উন্নয়নে তিনি সব করে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে প্রথমবার মিঠামইন সফর করেন। তখন আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। তখনকার হাওর আর এখনকার হাওরের মধ্যে আকাশ-জমিন পার্থক্য। প্রধানমন্ত্রীর কৃপায় হাওরের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। সেই পরিবর্তনটা প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখানোর জন্য হাওরবাসীর স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী হাওরে আসছেন এটাই আমাদের বড় পাওয়া।
অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে কেন্দ্র করে সমাবেশস্থল ও মিঠামইনসহ আশেপাশের সকল জায়গায় ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।