রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে আদালতের বাইরে তারা শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ পাবেন।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। অপর দুই আসামি মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর বড় ভাই আবদুস সালামের যাবজ্জীবন দণ্ডও বহাল রেখেছেন আদালত।
খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, আসামিদের স্বীকারোক্তিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে হত্যার এ ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধু প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল, ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব নয়।
আমাদের এ-ও বলতে দ্বিধা নেই যে আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আবদুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন।
সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের সুযোগ পায় দণ্ডিতরা। সে অনুযায়ী আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করতে আবেদন করেন মিয়া মো. মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম। সে রিভিউ আবেদনের সঙ্গে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতেও আবেদন করা হয়। শুনানির পর গত বছর ৪ অক্টোবর চেম্বার আদালত মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত করে আবেদন দুটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
এরপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আবেদন দুটির শুনানি হয়। গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি হয়। পরে আজ আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের। নিখোঁজের দুই দিনের মাথায় ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসার বাইরে ম্যানহোলে তাহেরের লাশ পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের পরদিন ড. তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভী মতিহার থানায় মামলা করেন। তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন উপপরিদর্শক আচানুল কবির ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।