ঝিনাইদহের শৈলকুপার মনোহরপুর ইউনিয়নের মাধবপুর জি কে সেচ খাল যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। খাল পাড়ের কাঁচা রাস্তাটির বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে খালে পড়ে গেছে। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে পথচারী কোনরকম চলাচল করলেও কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। কয়েকটি স্থানে রাস্তাটি ভেঙ্গে খালের সাথে মিশে যাওয়ায় গাড়ি নিয়ে চলাচল করা খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।মাঝে মধ্যে পথচারীরা খালের মধ্যে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে তবে যে কোন সময় এর থেকেও বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রাস্তাটি রক্ষা করে পাকাকরণ ও ভাঙন রোধ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।
সরেজমিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মহিষাডাংগা ব্রীজের পুর্ব পাড় থেকে মাধবপুর গ্রাম হয়ে নাগিরাট ব্রীজ এর পূর্ব পাড় পর্যন্ত ৩ কি মি কাঁচা রাস্তা আর এই রাস্তার পাশ দিয়ে গভীর ও প্রশস্ত একটি জিকে সেচ খাল গিয়ে মিশেছে কুমার নদীর সাথে। আবার এর পাশেই রয়েছে মহিষাডাংগার সুবিশাল ফসলের মাঠ। দীর্ঘ ১০ বছর যাবত কাঁচা রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ ভেংগে মিশে গেছে খালের সাথে যার ফলে রাস্তা সংকুচিত হয়ে গেছে। খালের পাড় দিয়ে দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। এই সমস্থ পরিবার ছাড়াও এলাকার মানুষের মাঠে যাওয়ার প্রধান রাস্তা এটি।এই খাল ঘেষা কাঁচা রাস্তাটির অবস্থা একেবারেই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন জনসাধারণ চলাচল করলেও দীর্ঘদিন রাস্তাটি ভেঙ্গে থাকায় যানবাহন চলাচল করা অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এখন শুধু মাত্র ঝুঁকি নিয়ে কোন মতে ছোট গাড়ি চলাচল করতে পাড়ছে। ফায়ার সার্ভিস, এ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোসহ বড় গাড়ি চলতে না পাড়ায় স্থানীয়রা চরম দূর্ভোগে পড়েছে। মাঠের কোন ফসল এই পথ দিয়ে গাড়িতে আনা নেওয়া সেইসাথে বাজারে কোন পন্য পরিবহন সম্ভব না হওয়ায় এলাকার মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছে।
জানা যায়, কিছুদিন আগে মাধবপুর গ্রামের আবেদ আলীর বাড়িতে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে এই রাস্তা দিয়ে ঢুকতে না পেরে নিরুপায় হয়ে ফিরে যায় যার ফলে কয়েকটি ঘরসহ আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। রাস্তা ভেংগে যাওয়ার কারণে বড় গাড়ি চলাচল করতে না পারায় অসুস্থ রোগী নিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার অনেক সময় মালামাল নিয়ে গর্তের মধ্যে পড়ে যায়। সম্পূর্ণ নাগরিক সুবিধার বাইরে থাকা এলাকাটি একটি জনবিচ্ছিন্ন গ্রামে পরিনত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইদ্রিস মৃধা বলেন, আমার বাড়ির সামনে থেকে কয়েক মাস আগে রাস্তার বড় একটা অংশ ভেঙ্গে খালে পড়ে যায়। এখন অল্প একটু আছে সেখান দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ছোট গাড়ী ও মানুষ চলাচল করে। তাই যেকোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পাড়ে। কর্তৃপক্ষের উচিত অতি দ্রুত রাস্তাটি রক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে বাঁধের ব্যবস্থা করা। রাস্তাটির বেহাল দশার জন্য আমরা নানা সমস্যার মধ্যে পড়েছি।
ইউপি সদস্য আঃ লতিফ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করি। রাস্তাটি ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে চলাচল করতে অনেক সমস্যা হয়। বাড়ির কাজের জন্য মালামাল নেয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া বড় কোন গাড়ী ও মালবাহী গাড়ী চলাচল করতে পাড়ছে না। তাই অতি দ্রুত রাস্তাটিকে বাঁধ দিয়ে রক্ষা করা উচিত তা না হলে কিছু দিন পরে এ রাস্তা দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। বিভিন্নমহলে ধরনা দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।
ইজিবাইক চালক মুক্তার আলী বলেন, এ রাস্তাটি ভেঙ্গে যাওয়ায় একটি একটি করে ভাঙ্গা অংশ দিয়ে গাড়ি যেতে হয়, তাও খুব ঝুঁকি নিয়ে। যেকোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এখনি রাস্তাটি মেরামত করা না হলে এ রাস্তা দিয়ে অন্যান্র এলাকার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। অসুস্থ কোন রোগী গাড়িতে নেওয়া সম্ভব না। আমরা চরম দূর্ভোগে আছি।
ভ্যান চালক মানিক মিয়া বলেন, এই রাস্তা দিয়ে মালামাল নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। কিন্তু ভ্যানে করে মালমাল নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের উচিত রাস্তাটি রক্ষার জন্য খালের পাড়ে একটি স্থায়ী বাধের ব্যবস্থা করে রাস্তার ভাঙ্গা অংশ মেরামত করা। তাই অতি দ্রুত মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।
মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে আমি ওই রাস্তার ভাঙ্গা অংশটি কয়েক বার পরিদর্শন করেছি। এখানকার লোকজন সমস্যার মধ্যে আছে। মেরামতের জন্য উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক মেরামতের জন্য কোন বরাদ্দ না থাকায় মেরামত করা সম্ভব হয়নি। বড় ধরনের বরাদ্দ পেলে স্থায়ীভাবে বাঁধ মেরামত করা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এম হাকিম আহমেদ বলেন,আমি এলাকাটি পরিদর্শন করেছি।মাধবপুর পুরাতন ব্রীজের আশে পাশের বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা ভেংগে খালের সাথে মিশে যাওয়ায় এলাকার মানুষ দূর্ভোগে পড়েছে। রাস্তাটি রক্ষা ও ভাঙন রোধ করা জুরুরী হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, মাধবপুর জি কে সেচ খালের ভাঙ্গন বিষয়ে আমার জানা নেই।তবে সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।