বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেছেন, ‘সরকার বিএনপির সঙ্গে ডিফেন্সিভ খেলছে। যখন যে দল গোল খায়, সেই দল কিন্তু গোলবারের সামনে দাঁড়ায়। প্রটেকশন দেয়ার জন্য যাতে গোল না হয়। কিন্তু আর উপায় নেই কারণ তারেক রহমান মেসির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, এবার গোল হবেই হবে। যতই আওয়ামী লীগ গোলবারে প্রটেকশন দেন কোনো লাভ হবে না।’
শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বর বটতলায় পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ পদযাত্রার আয়োজন করে রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানা বিএনপি।
সমাবেশে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম সাইফুল্লাহ রুবেল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মোন্নাফ মুন্নাফ, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ নেওয়াজ লাবু, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজেকা সুলতানা ফেন্সি প্রমুখ।
সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে খালেদা জিয়ার রাজনীতির করা প্রসঙ্গে আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরা এখন হঠাৎ কেন উল্টো পথে আসছেন। তারা এখন বলছেন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে কোনো আপত্তি নেই। এর মানে তারা ভয়ে ভীত হয়েছেন। কিন্তু আমরা সরকারকে বিশ্বাস করি না। এই সরকারের এমনই কারসাজি, তাদের কথার সাথে কাজের কোনো মিল নেই। আমরা জানি শয়তান মানুষকে কু-বুদ্ধি দেয়, আর আওয়ামী লীগ শয়তানকে বুদ্ধি দেয়। সুতরাং আওয়ামী লীগের কথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।’
সাবেক এই উপমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্রে যেমন নি¤œচাপ সৃষ্টি হয়ে আস্তে আস্তে ভূমিকম্প-ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, বিএনপিও সেই ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার মনে করছে এই ধরণের পদযাত্রায় দিয়ে তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে না। কিন্তু আমরা সরকারকে বলছি, অপেক্ষা করেন নি¤œচাপ শুরু হয়েছে শিগগিরই ঘূর্ণিঝড় হবে বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। এই দানব সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমরা কেউ ঘরে ফিরে যাব না।’
আসাদুল হাবিব বলেন, ‘সরকার যদি দ্রব্যমূল্য কমিয়ে, ভোটাধিকার ফিরিয়ে, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করে এবং বিদ্যুৎতের দাম কমিয়ে দেয় তাহলে মানুষের মনে শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু তা না করে সরকার শান্তির নামে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। আমাদের পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করতে চায়। এটি সরকারের জন্য ভালো হবে না। আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের কথা মনে হলে একাত্তর সালের শান্তি কমিটির কথা মনে হয়। পাকহানাদার বাহিনীরা যখন আর বাংলাদেশের মানুষকে মোকাবিলা করতে পারছিল না, তখন তারা শান্তি কমিটি গঠন করেছিল। আজ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন নাভিশ্বাস উঠেছে। সবকিছুর দাম বাড়িয়ে আমাদের জীবন দুর্বিষহ করছে সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন প্রতিদিন, প্রতিমাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেদিকে সরকারের কোনো দুঃখ নেই। কারণ সরকারের যারা রয়েছেন তারা অবৈধ টাকার মালিক হয়েছেন। তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তারা বাংলাদেশের বাইরে কানাডায় বেগমপাড়ায় বাড়ি বানিয়েছেন। তারা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে বাড়ি বানিয়েছেন। আর বাংলাদেশের মানুষ আজকে না খেয়ে কষ্টের মধ্যে আছে। অথচ মানুষদের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে সরকার পরিহাস করে বলছে দেশে নাকি কিছুই হয়নি।’
এরআগে বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোড থেকে পদযাত্রা নিয়ে বের হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পদযাত্রাটি পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, প্রেসক্লাব চত্বর, গ্রা- হোটেল মোড় হয়ে শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। কর্মসূচিতে বিএনপি ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, জাসাস, ওলামা দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
একই দিনে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো, দমন-পীড়ন বন্ধ, খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের নিশর্ত মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে রংপুর মহানগরীর তাজহাট, মাহিগঞ্জ, পরশুরাম, হাজিরহাট ও হারাগাছ থানা বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে